Posted in Uncategorized

পুজোর কড়চা

শ্রীসঞ্জয় উবাচ

আমার পুজো শুরু হত বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাপীর সঙ্গে মেটাল বক্সে মাংস-ভাত খেয়ে ফেরার পথে রাদু থেকে নতুন জুতো কিনে। তারপর প্রতি রাতে খাটের তলা থেকে সেই জুতো বের করে মচ্‌মচ্‌ করে মার্চ পাস্ট – পুজোর সময় পায়ে ফোস্‌কা না পড়ে!

পঞ্চমীতে মামার বাড়ি যাবার প্রধান আকর্ষণ মাইমাদের কাছ থেকে পুজোর রসদ সংগ্রহ করে ষষ্ঠীতে ফেরা। যাতে পুজোর কটা দিন ফুটানিটা জমে ভাল। আধা রসদ ক্যাপ-বন্দুকেই শেষ। বাকিটা কোল্ড ড্রিংস আর বড়িষা কাফের পর্দা ঘেরা কেবিনে বসে বন্ধুদের সঙ্গে তেল চপচপে রবারের মত মোগলাই নিয়ে যুদ্ধ। আর মাকে লুকিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখা।

এরপর আসি পুজোর নাটকের মহড়ায়। ভরদুপুরে শেয়ালের মুখোশ পরে হযবরল-র শেয়াল পণ্ডিত সেজে ঘেমে নেয়ে একাক্কার। পরেরবার আবার হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালায় নেংটি ইঁদুর। মানুষ সেজে অভিনয় অধরাই রয়ে গেল।

পুজো প্যাণ্ডেলে আবার বিরাট দায়িত্ব – সকাল-বিকেল রেকর্ড প্লেয়ারে রেকর্ড পালটানো। পালা করে মান্না-কিশোর-হেমন্ত। আর দুপুরে বড়রা বাড়ি গেলেই তেড়ে হিন্দি গান চালানো আর ধরা পড়লে চরম বকুনি। সন্ধ্যেবেলা বেপাড়ায় ঠাকুর দেখা আর লুকিয়ে সিগারেটে সুখটান। কদিনের মত পড়াশোনা শিকেয় তোলা।

ঢাকীরা যখন দুপুরে প্যাণ্ডেলের পেছনে ঝিমোতো সেই ফাঁকে তাদের ঢাকে বেতালা চাঁটিতে তাদের কাঁচা ঘুমের দফা রফা। সেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা ঢাকীদের ওপর একটা অন্যরকম মায়া পড়ে যেত। দশমীর পরের দিন তারা যখন বাড়ি বাড়ি যেত টাকাপয়সা আর জামাকাপড় পাবার আশায় আমিও উৎসুক হয়ে তাদের অপেক্ষায় থাকতাম। একবার পুরোনো জামা হাতের কাছে না পেয়ে বাপীর সে বছরের পুজোর নতুন জামা তাদের দিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর কপালে বকুনিও জুটেছিল বলাই বাহুল্য। পরের বছর যখন শুনলুম বনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সেই ঢাকী বাঘের পেটে গেছে আমার কি যে কষ্ট হয়েছিল বলার নয়। সে যেন স্বজন হারানোর দুঃখ। আজও সেই মুখটা চোখে ভাসে।

দশমীর দিন মোহিত হয়ে সেলুনের শান্তিদার ধুনুচি নাচ দেখে তার অন্ধভক্ত হয়ে যাওয়া। তার ওপর শান্তিদা ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার কাজেই আলাদা টান। তারপর সিদ্ধি খেয়ে পুকুর ঘাটে সটান শুয়ে থাকা আর উঠে বসতে গেলেই বেদম হাসি। তার ওপর কোন উপকারী বন্ধু গজা খাওয়ানোয় হাসির ছর্‌রা বেড়ে দশগুণ।

পাড়ার এক দাদার খুব রাগ ছিল এক কাকুর ওপর, কারণে অকারণে খ্যাচখ্যাচ করত বলে। সেবার মোক্ষম সুযোগ এসে গেল। ঠাকুর বিসর্জনের সময় অন্ধকারে মওকা বুঝে কার্তিক-গণেশের আগেই সেই কাকুকে পেছন থেকে এক ঠেলা। হেমন্তের কনকনে ঠাণ্ডায় এঁদো পুকুরের জলে পড়ে সে কাকুর যে কি নাজেহাল দশা!

আর্টিস্ট ভাগ্নে বলে মামাবাড়িতে ভারি খাতির। মেজমাইমার রঙ চটে যাওয়া চিনেমাটির মাদুর্গা রঙ করে রাখা ছিল বিজয়ার পর গিয়ে ফেরত দেব বলে। সেবার বিসর্জনের ঢাকের বাদ্যি মাথার পোকা দিল নাড়িয়ে। ঘোরের মধ্যে ঘরে গিয়ে সেই সপরিবারে মা দুর্গার মূর্তি নিয়ে এসে ‘বল দুগ্‌গা মাঈ কি জয়!’ বলে এক্কেবারে ঝপাং করে জলে।

P.C. Google Images

Author:

I do whatever I like and whenever I like :) ;P

Leave a comment