Posted in kids - Chandrabhal Basu

I am the Tree!

Near oceans, near seas

Near forests I lie;

I am tall and shady

Can you guess who am I.

 

I have brown branches

And a variety of leaves,

Instead of cutting me

Can you plant me, please!

 

I protect you from

A drought or a flood.

I live in green meadows

Or in the deep mud.

 

I am tall as a lamp-post

Or short till your knee.

I provide you with Oxygen

For I AM THE TREE.

 

 

Posted in kids - Chandrabhal Basu

Football

It is a Game which is played

With legs and its called ‘Football’,

It is played in Stadiums

Which can be large or small.

 

There are eleven players on each side

And these players rely on

Their Coach who work as a guide.

 

There are two goalposts

Where you score goals;

The players wear boots with Studs

Which have rubber moulds under the soles.

 

The players have names like ‘Goalkeeper’

This game is known to a celebrity or a poor sweeper.

— Chandrabhal Basu (12yrs)

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (পর্ব – ৭)

Resort World-র basement থেকে escalator চেপে ওপরে উঠেই S.E.A. Aquarium. কিন্তু সেখানে আবার লাইন দিয়ে টিকিট নিতে হল। উফ্‌, এই লাইন যেন কিছুতেই আর পিছু ছাড়ে না! ভেতরে ঢুকে যথারীতি কোথায় যাব কোনদিকে বুঝে উঠতে পারছি না। Amphitheatreএ বসে শো দেখবো না কি গ্যালারীতে ঢুকে মাছ! ওদিকে ঘড়ির কাঁটা এগিয়েই চলেছে। Sentosaএ তো কিছুই দেখা হয় নি সেভাবে। খানিক এদিক ওদিক করার পর অবশেষে খোঁজ মিলল গ্যালারীর।

“Wow” – নিচে দিয়ে মানুষ চলেছে আর মাথার ওপর দিয়ে ইয়া বড় Shark. কত রকমের কত shark, কত মাছ! মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁওয়া যাবে। মাঝের কাঁচের ব্যবধানটুকু ঘুচিয়ে দিতে কতক্ষণ! সে বিচিত্র অভিজ্ঞতার ঘোর কাটিয়ে বেরোনো মুশকিল। মনে হয় অনন্ত সময় ওখানেই বসে থাকি। আগেরদিনের আমার ‘Lori’-বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যায়। Shark-র রাজ্য ছেড়ে গিয়ে পড়লুম রংবেরঙের মাছের দুনিয়ায়। বাব্বা, এতও রঙও হয় মাছের! কলকাতায় যখন একবার ঝোঁক করে aquarium কেনা হয়েছিল তখন নতুন নতুন মাছ দেখলেই কিনতে ইচ্ছে হত। কিন্তু সেখানে রঙের তো এতও বৈচিত্র‍্য ছিল না। একমাত্র গোল্ডফিস ছাড়া আর কোন মাছ তো সাদা-কালো ছবির বাইরে বেরোতে পারে নি। আর এখানে কি রঙ নেই! লাল, নীল, হলদে, গোলাপী, বেগুনী, কমলা – রঙের মেলা। আহাঃ কাকে ছেড়ে কাকে দেখি। এ কোন রাজ্যে এসে পড়লুম গো! মা গো, তোমার জন্যে কি যে মন কেমন করছে। এসব কি আমার জন্যে! এসব তোমার জন্যে।

মনে আছে বম্বের ‘Taraporewala Aquarium’ এ গিয়ে মা আর আমি কতক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম। মা আমায় কতওরকমের মাছ চিনিয়েছিল। সেখানে প্রথম দেখি ‘Sea Horse’. জীবনবিজ্ঞান বইয়ের পাতার বাইরে সত্যিকারের দেখা – এক্কেবারে সত্যি, সত্যি, সত্যি – ঘোড়ার মতো মুখ আর নিচের অংশটা ওই Mermaid-র মতো পাকানো। Mermaid বা Merlion কতটা সত্যি জানি না, তবে ‘Merhorse’ যে ষোলো আনা সত্যি তাতে সন্দেহ নেই। তবু গল্পকথায় এদের স্থান হয়নি কেন? হয়তো ‘Sea Horse’ সত্যি বলেই। তার ছোট্ট দেহটার ওপর কোনোভাবেই বিশালতার কল্পনা চাপানো যায় না, তাই!

যা দেখছি তাতেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। একটুও ইচ্ছে করছে না এই জলজপ্রাণীদের সঙ্গ ছেড়ে আর অন্য কোথাও যাই। ঘুরে ঘুরে এসে পড়েছি জেলিফিসের আখড়ায়। সাদা স্পঞ্জের ছাতার মতো জেলিফিস। ছাতার চারপাশ দিয়ে সরু সরু শুঁড় ঝুলছে। তবে আলোর খেলায় সে শ্বেত-শুভ্র রঙ কোথাও পরিণত হয়েছে লালে, কোথাও গোলাপী, কোথাও হলুদ আবার কোথাও স্বপ্নমাখা নীল।

দরজা ঠেলে সামনে এগোতেই দেখি এক বিশাল কাঁচের দেওয়াল। দেওয়ালের এপাশে সিঁড়ির ধাপে ধাপে শ্রান্ত দর্শকের ভীড়। তারা কেউ বা ক্লান্তিতে ঘুমিয়েই পড়েছে ঠাণ্ডা ঘরের আরামে। কেউ বা ব্যাগ খুলে খাবারের সম্ভার সাজিয়ে জমিয়ে বসেছে। আর কাঁচের ওপাশে কৃত্রিম সমুদ্রপুরী। বিশাল বিশাল Shark, Catfish, Carp; আর তাদের তাড়া খাওয়া ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে। কোনও কোনও মাছ আবার নিঃস্তব্ধ দুপুরের ঘুমের দেশে। তবে তাদের সে বিশ্রাম বেশীক্ষণের জন্যে নয়। এপারের দর্শকের অতি উৎসাহ দিবানিদ্রায় বড়ই ব্যাঘাত।

আরে ওই জলের মাঝে কি দেখি! ডুবুরি মনে হচ্ছে যেন! হ্যাঁ তো! এখানে সাহসী পর্‍্যটকের দল সমুদ্রের তলদেশে মাছের রাজ্যে বিচরণের ছাড়পত্র পেতে পারে। ঠাণ্ডাঘরের ওই স্বপ্নিল জগৎ এক কথায় যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় ছোটবেলার জলপরীদের রাজ্যে।

আমাদের দলপতি তখন পায়ের ব্যথায় নিতান্তই কাবু। গ্যালারীর সিঁড়ির ধাপে বসে বাইরের গরম আর ঘামের ভয়ে বলছে, “থাক, আর কোথাও গিয়ে কাজ নেই। এখানেই এই ঠাণ্ডায় বসে থাকা যাক”।

(ক্রমশঃ)

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (শেষ পর্ব)

১১

দুপুরবেলায় তুলিকার একটা Committee meeting আর আমাদেরও ঘরে ফেরার তাড়া। তাই এরপর ও আমাদের গাড়ী করে এক্কেবারে Queenstown মেট্রো স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে গেল। আর আমরাও হোটেলের পথ ধরলুম। Kallang স্টেশনে নেমে হোটেলে যাবার পথেই দেখি এক বাংলাদেশী রেস্তোরা। দেখি অবশ্য রোজই – এদিন ওখানে বসেই বিরিয়ানী দিয়ে আমাদের দুপুরের খাওয়া সাঙ্গ করলুম। তারপর হোটেলে ফিরে – আর না; এবার ঘরে ফেরার টান, ঘরে ফেরার গান। মালপত্র গুছিয়ে নিয়ে সোজা চললুম Airport-র পথে।

এই শেষ সিঙ্গাপুরীয় সফরের ট্যাক্সিচালকটি ছিলেন ভারি মজাদার। সারা রাস্তা কত যে কথা বলতে বলতে চললেন। ছেলেদের বললেন – ‘There is no short cut to success. You have to work hard. একদিন এদেশে চলে আসবে। এ দেশ সবার। এখানে কোনোও racialism নেই। পাশেই তো মালয়েশিয়া, কিন্তু সব জায়গায় শুধু ‘ভূমিপুত্র’ নিয়ে লড়াই”।

Airport-এ ঢুকে আমাদের প্লেনের তখন অনেক দেরী। আরে ঘুরে ঘুরে দেখো না, কি সুন্দর সব ঝাঁ চকচকে দোকান। এখানে এসে ‘Duty free shop’ থেকে কিছু নেবে না! সে আবার হয়! ছেলেদের জন্যে কেনা হয় নি কিছুই। শেষমেশ দুই ছেলের দুটো Singapore লেখা T-shirt আমার – ; সে-ই প্রথম দিন থেকে জুলজুল চোখে দেখতে থাকা অর্কিডের একটা সেট – কানের দুল, গলার লকেট-হার।

অবশেষে প্লেনে ওঠার সময় হল। প্লেন বেশ ফাঁকা। তাই প্লেনে বসেই এয়ারহোস্টেসকে আনুরোধ করায় তিনি তৎক্ষণাৎ জানলার ধারে সিটের ব্যবস্থা করে দিলেন। ছেলেরা এবারে বেশ পোক্ত হয়ে উঠেছে। প্লেনে ঢুকেই সোহম উঁকি মেরে দেখে নিয়েছে সিটের সামনে LCD screenটি ঠিক আছে কি না। তাই তারা কিন্ত সিট বদল করে আমাদের কাছে আসতে রাজি নয়। আর দাদা যখন পাশেই আছে, কি চিন্তা! বরং মা কাছাকাছি থাকলেই শোবার জন্যে তাড়া লাগাবে।

Screen এ এটা ওটা ঘোরাতে ঘোরাতে দেখি ‘Rout map’ – সেখানে প্লেন কত উচ্চতায় কত বেগে কোন পথে চলেছে দেখা যাচ্ছে। আমি তো মহা খুশী। কিন্তু পথ যেন আর ফুরোয় না! এই তো ভারতবর্ষের কাছাকাছি এসে পড়েছি! ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো…’। আচ্ছা, এটা কি কলকাতার ওপর দিয়ে যাবে! আচ্ছা, আর কতটা, আর কতটা!

৪০০০০ ফুট উঁচু, এইতো ৩০০০০ ফুট, এইতো কুড়ি, এবার দশ… আমরা দেশের মাটি স্পর্শ করতে চলেছি। পাঁচদিনের ঝটিকাসফর এবার শেষের পথে। পৃথিবীর নবীন এক উন্নত দেশ দেখা সাঙ্গ হল এবার।

সিঙ্গাপুর – প্রাচ্যের আমেরিকা। আজকাল ভারতবাসি, বিশেষতঃ ভ্রমণপিপাসু বাঙ্গালীর এক প্রিয় গন্তব্যস্থল। তবু, সেখানে Universal Studio র আধুনিকতার জাঁতাকলে পড়ে প্রৌঢ় বাঙালী দম্পতি হা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সেখানে মুস্তাফার বিপণী সম্ভারে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। গরীবদেশের পর্যটককূল সিংডলার আর টাকার হিসেব কষতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খেতে থাকেন। পকেটে পড়ে থাকা শেষ কিছু খুচরো কয়েনের সদ্‌গতি করতে Airport Duty-free shop এ ঢুকে থরে থরে Lipstick, Nailpolish, Eyeliner র ভীড়ে থতমত খেয়ে হতাশ ক্রেতা শুকনো মুখে ফিরেই যান। কিন্তু আধুনিকতা যে জাতির রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, শিরায়-শিরায়; শূন্য প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও শুধু আধুনিক মানসিকতা সে জাতিকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে সমগ্র বিশ্বের কাছে সিঙ্গাপুর যেন তারই এক জ্বলন্ত নজির।।

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (পর্ব – ১০)

১০

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার তাড়া নেই। তবে সেদিন আমার সিঙ্গাপুরে আসার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। কুড়ি বছরেরও বেশী পরে তুলিকার সঙ্গে দেখা হবে। আর সেই সুবাদে মিলবে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় দেখার সুযোগ। বিশেষতঃ National University of Singapore (NUS) যেখানে বিশ্বের নবম স্থানে।

তুলিকার সঙ্গে ই-মেলে আগেই যোগাযোগ করে নিয়েছিলাম। সেইমতো মেট্রো স্টেশন, ট্রেনের রুট, ডিপার্টমেন্টের নাম, ঠিকানা সবই জানা হয়ে গিয়েছিল। আজ আমাদের Kallang থেকে Green line এ Bouna Vista station এ নামতে হবে। সেখানে থেকে Yellow line এ মাত্র দুটো স্টেশন Kent Ridge. স্টেশন আবার NUS campas এর ভেতরেই। Yellow line metro-এ উঠতে গিয়ে নতুন করে আবিষ্কার করলুম মেট্রোর দরজার বাইরে প্ল্যাটফর্মের ওপর তীরচিহ্ন আঁকা রয়েছে। ঠিক দরজার মুখোমুখি বাইরে যাবার তীর আর তার দুপাশে লাল রঙ দিয়ে আঁকা ভিতরের দিকের তীরচিহ্ন। যথারীতি কোনোদিকে না তাকিয়ে যেই না মাঝের লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি পিঠে কলেজের ব্যাগ আঁটা এক খোকা সাহেব দেখি কটমট করে দেখছে।

Kent Ridge স্টেশনে নেমে ইউনিভার্সিটির নিজস্ব Shuttle bus A1-এ চেপে নয় নম্বর বাস স্টপ ‘Car park 13’ –এ নামা হল। পথে School of Mathematics, Central Library, Canteen, Quarters – সব দেখতে দেখতে এসেছি। এক্কেবারে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। সত্যি সত্যি বিদেশী ইউনিভার্সিটির মধ্যে দিয়ে চলেছি! সকব তবু আমেরিকায় গিয়ে পুতুর কাছে University of Notre Dame ঘুরে এসেছে। এখন মনে হয় ইস্‌, কেন যে কোনদিন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলুম না!

School of Computing এর তিনতলায় ঘর Dr. Mitra-র। নিচে থেকে এক ছাত্রী পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল। তুলিকা –। কতদিন পরে দেখা! ছেলেদের বললুম – “এই দেখো, স্কুলে থাকতে সেই ক্লাস ফাইভে যে বন্ধুটাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতুম এই হল সেই তুলিকামাসি”।

তুলিকা আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবকিছু দেখাতে লাগলো। ওর ঘরের পাশের ঘরটাই Dr. Abhik Roy Chowdhuryর। সেই মাধ্যমিকের সময় থেকেই যার কথা খুব শুনেছি বাবাদের মুখে – ‘বিমানদার ছেলে – এক্কেবারে jewel’। তুলিকার মুখে শুনলুম অভীক তখন দেশের বাইরে। ওদের দেশের কড়া নিয়মে মা এবং বাবা একসঙ্গে বাইরে যেতে পারবে না। তাই ওরা এমনভাবে বাইরে যাবার প্ল্যান করে যাতে একজন না একজন জিষ্ণুর সঙ্গে থাকতে পারে। জিষ্ণু নীলেরই বয়সী। তবে সে তখন স্কুলে।

তুলিকার Scholar room দেখতে গিয়ে শুনলুম সেই রুমে জিষ্ণুরও ঢোকার অনুমতি নেই। সেখান থেকে ক্যান্টিন পেরিয়ে আমরা গেলাম Central Library। সর্বত্রই কিন্তু একই ছবি। কোত্থাও ছাত্রছাত্রীদের জটলা দেখা যায় না। Cafeteria হোক অথবা কোনো Foyar – সর্বত্রই যে যার নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কাজ করছে। বিশাল বিশাল Lecture Hall – দরজার কাঁচ দিয়ে উঁকি মেরে দেখি সেখানে তিনটে বিরাট বিরাট Screen এ ppt দেখানো হচ্ছে আর ছাত্রছাত্রীদের ল্যাপটপেও সেই একই ppt displayed হচ্ছে। Lecture-র আগে থেকেই সব presentation Netএ upload করা থাকে। যাতে ছাত্ররা আগে থেকেই তৈরী হয়ে ক্লাসে আসতে পারে। পাশে অপেক্ষাকৃত ছোট Tutorial room ও দেখলুম।

যা দেখি আমি তো তাতেই মুগ্ধ হয়ে যাই। এমন কি বিরাট Auditorium এর বাইরে নিয়ন বাতির ‘Lecture in Progress’ লেখা দেখেও আমি চকৎকৃত। তুলিকা তো বলেই ফেলল – আমি তো দেখছি ছেলেদের থেকে ছেলেদের মায়ের উৎসাহ বেশী। তা ঠিকই।

তুলিকার ‘নিশান’ গাড়ী করে আমরা University Play Ground পেরিয়ে এসে পৌঁছলুম University Township-এ। পৃথিবীর বিভিন্ন ইউনভার্সিটির সঙ্গে NUS এর ‘Tie up’ রয়েছে। আর তাই NUS Campas-র মধ্যেই এক একটা Universityর একেকটা Tower. তুলিকা না থাকলে আমার বিদেশী ইউনিভার্সিটি দেখার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যেত।

(ক্রমশঃ)

 

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (পর্ব – ৮)

ছেলেদের মন খারাপ – সকালে প্যারাগ্লাইডিং আর অন্য সমস্ত খেলা কিছুই খেলতে পায় নি। মানে নিতান্তই সাহসে কুলোয় নি। এবার সোহম ঝোঁক ধরেছে ‘Luge Ride’ করতেই হবে। আবার ফিরে চললুম Imbiah Lookout.

এবারের প্রথম গন্তব্যই ‘Skyline Luge Sentosa’. হাতের ব্যাণ্ডে ছাপ মারিয়ে চারজনে চারটে তিন চাকা গাড়ীতে চেপে বসলুম। নিজেদের শরীরকে আগুপিছু করে গাড়ী চালাতে ও থামাতে হবে। Luge Ride-এর দুটি পথ। 688m Dragon Trail আর 628m Jungle Trail.

Over-protective মা হিসেবে একেকবার চিন্তা হচ্ছে – ছোট ছেলেটা একা একা গাড়ী চালাতে পারবে ঠিক! ধাক্কা লাগবে না তো! আর বড়বাবু – সে তো এসব গাড়ী চালানোর ধারেই যায় না! কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল সোহমের Luge control আমার চেয়ে ঢের ভাল। আমরা দুজনে এলুম Dragon Trail দিয়ে আর বাকি দুজন Jungle Trail ধরে।

আরে এই Luge বস্তুটা তো বেড়ে! বেশ মজা লাগে এটা চড়তে। ছেলেদের ভারি ইচ্ছে আবার চড়ে। তবে তাদের বাবার মোটেও ভালো লাগে নি। তার মতে চারচাকার মোটরগাড়ী ঢের ভাল।

এরপর চড়ে বসলুম SkyRide এ। SkyRide হল চারদিক খোলা ropeway. প্রথমে তো মহা উৎসাহে বসুসাহেব ছবি আর selfie তুলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেই না সেই চলন্ত চেয়ার রাস্তাঘাট-গাছপালা সবের ওপর দিয়ে চলতে শুরু করল, তখন নিচের দিকে তাকাতে গিয়েই চোখ বন্ধ করার দাখিল। ওই উঁচু থেকে বড় বড় গাছের মাথার ওপর দিয়ে নিচের দিকে চাইলেই ভয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়। যদি কোনো কারণে একবার দড়ি ছিঁড়ে যায়! উফ্‌, এ যে একেবারে ‘নন্দলালের দশা’।

Skyline Luge থেকে বেরোতেই সামনেই দেখি আমাদের হারানিধি ‘Madame Tussauds’. ছুটে ছুটে সেখানে যেতেই তারা বললে, – আগে Image of Singapore দিয়ে শুরু করলে হয় না? – ঠিক আছে। আমাদের আর কি অসুবিধে! দেখলেই হয়। – তবে একটু অপেক্ষা করো ডক মাস্টারের আপিসের সামনে। শো শুরু হবার কথা চারটের সময়। কিন্তু আমরা মাত্র চারজন। তাই একটু অপেক্ষা করলে হয়, যদি আরো কেউ আসে।

সব্যসাচী সিনেমাটা মনে আছে কি? জাহাজঘাটায় সেই যে সেই অফিসটা ছিল – যেখান থেকে সব মালপত্র ওঠানামা করত। আর সেইখানে একটা সাইকেল রাখা ছিল দরজায় হেলান দেওয়া। ওমাঃ, ঠিক সেই অফিস, সেই দরজা, এমন কি সেই সাইকেলটা পর্যন্ত এক! অফিসের বাইরে একটা ঘন্টা ঝুলছে।

ব্যাপারটা কি হতে চলেছে ভাবতে ভাবতে দেখি একটি ছেলে তার মায়ের সঙ্গে আমাদের পিছু পিছু লাইনে এসে দাঁড়িয়েছে। আর অমনি টংটং করে ‘হারবার মাস্টারের’ দরজার ঘন্টা বেজে উঠেছে।

অফিসের মধ্যে থেকে এক কর্মচারী বেরিয়ে এসে আমাদের ভেতরে ঢুকতে বলল। আর গম্ভীরভাবে বলল – আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তোমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। অমনি কোথা থেকে এক স্যুটেড-বুটেড সাহেব এসে বলতে শুরু করলে – মনে করবেন না এটা ২০১৫ সাল। এটা হল আঠারোশো …।

এবার বুঝতে পেরেছি। এরা সব নাটকের মতো নিজেরাই সেজেগুজে আমাদের সিঙ্গাপুরের ইতিহাস-ভুগোল পড়াবে। সিঙ্গাপুরের পোর্টে পৃথিবীর কোন দেশ থেকে কি কি আমদানি হয় সে সবের নমুনা রাখা রয়েছে। যেমন দক্ষিণ ভারত থেকে আসা গরম মশলা, চীন থেকে আসা সিল্ক ও চিনামাটির পাত্র।

যা হোক পোর্ট কমিশনের আপিস থেকে বেরিয়ে বসলুম গিয়ে সিনেমা হলে। সেখানে সিঙ্গাপুরের চার জনকের ছবি টাঙ্গানো – একজন ব্রিটিশ, একজন চীনে, একজন ভারতীয় আর একজন মালায়ী। ওমাঃ, টেকনলজির কি মহিমা! সেই টাঙ্গানো ছবির মানুষগুলো হঠাৎ জীবন্ত হয়ে কথা বলতে শুরু করল! এক্কেবারে ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। অথচ সেটাই কেমন করে movie হয়ে উঠল!

এরপরের একেকটা গ্যালারী  এমনই একেকটা সময়ের সিঙ্গাপুর অথবা বিভিন্ন জাতির লোকেদের গল্প – China Town, Little India,  অর্কিড ফুলের আমদানির গল্প। তামিল ভাষার যে কেন এতো গুরুত্ব ওখানে সেটা বেশ বোঝা গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় অধিকার বোধও মনে জেগে উঠল – হুঁ হুঁ বাবা, এখানে আমাদের অধিকারও কিছু কম নয়!

সবশেষের গ্যালারীটা অবশ্যই টেকনলজির মহিমা। বিভিন্ন LCD  screen এ দেখানো হচ্ছে সিঙ্গাপুরের আধুনিকতার বিবর্তনের রহস্য। আমার সবচেয়ে যেটা ভাল লাগল তা হল গগনচুম্বী বহুতলকে ঘিরেও সবুজের সমারোহ। কিভাবে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহুতল বাড়ী বৃদ্ধি হয়েছে অথচ কেমন সুপরিকল্পিতভাবে তার সঙ্গে সঙ্গে সবুজায়নও করা হয়েছে।

এরপর জল-অভিযান। ‘The Spirit of Singapore Boat Ride’. নির্দিষ্ট ট্র্যাকের ওপর দিয়ে স্বয়ংক্রিয় নৌকা ভেসে চলেছে আমাদের নিয়ে আর দুপাশে সাজানো রয়েছে সিঙ্গাপুরী জীবনযাত্রার প্রমাণ সাইজের নিদর্শন।

নৌকা থেকে নেমেই Mr. Ishak এবং মাও সে তুং আর নেলসন ম্যাণ্ডেলাজী আমাদের স্বাগত জানালেন Madame Tussauds র অন্দরমহলে। সেখানে দেখি বেচারি রাণী এলিজাবেথ আমাদের জন্যে তাঁর সাধের সিংহাসনটি ছেড়ে দিয়ে কাঁচুমাচু মুখটি করে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও সেই সুযোগে আমার ‘প্রিন্স হ্যারি’কে সঙ্গে নিয়ে সিংহাসনে বসে পটাপট ছবি তুলে ফেললুম। তারপর সোহমের ডেভিড বেক্‌হ্যামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফিটিনেস টেস্ট আর সচিন তেণ্ডুলকারের সঙ্গে ব্যাটিং প্রাক্টিস শুরু হল। এদিকে আমাদের চিরগম্ভীর নীলবাবু হঠাৎ ভীষণ খুশী হয়ে নিজে থেকে ছবির জন্যে pose দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করতে লাগলেন। মাথায় রংচঙে wig পরে তার ড্রাম বাজানো যদি দেখতে! সামনে দাঁড়ানো Elvis Presley আর Madonna লজ্জায় মুখ লুকোবার দাখিল।

তারপর Jacky Chang র সঙ্গে কুংফু-ক্যারাটে লড়ে Schwarzeneggerর সঙ্গে বাইকে চড়া। আহাঃ, সবচেয়ে ভাল ছিল আমার অড্রে হেপবার্ণের সঙ্গে চায়ের আসর! এরপর অমিতাভ-ঐশ্বর্য্য-শাহ্‌রুককে পেরিয়ে আঞ্জেলিনা জুলির রাজ্যে প্রবেশ। বাসুসাহেব বোধহয় বৌয়ের সামনে সুন্দরি নায়িকাদের মোমের পুত্তলির সঙ্গে ছবি তুলতে লজ্জা পাচ্ছিলেন। তাই পরে নিজের মোবাইলে আলাদা করে তাদের সঙ্গে selfie তোলা হল।

সত্যি কথা বলতে কি আমাদের ভারতীয় চিত্রতারকাদের কারুর মুখই আমার সেরকম ভাল লাগ নি। তবে সব মিলিয়ে বেশ ভালই লাগল এই মনিষিসঙ্গ। ত্যুসোমাসিমার বাড়ী থেকে বেরিয়ে দেখি বাইরে সন্ধ্যা নেমে গেছে। তখন সামনেই Tiger Sky Towerর Show time দেখে সেটাতে চড়ে পড়লুম।

এটি সিঙ্গাপুরের উচ্চতম Observation Tower – 131m বা 430ft উঁচু। Sky Tower র চূড়ায় পৌঁছে আলো ঝলমলে রাতের সিঙ্গাপুর, দূরে সিঙ্গাপুর বন্দরের জাহাজের আলো, একদিকে ইন্দোনেশিয়া, একদিকে মালয়েশিয়া দেখার রোমাঞ্চ মনকে ছুঁয়ে গেল। আধঘন্টার এই ঘুরন্ত সফরের শেষে ছুট লাগালুম Merlion র খোঁজে। নাহ্‌, আর ভাগ্য সদয় হল না। পনেরো মিনিট আগেই সেদিনের শেষবারের মতো  গেট বন্ধ হয়ে গেছে। তাই নিচে থেকেই ছবি তোলার পাঠ সাঙ্গ করে সুন্দরী সেন্টোসাকে বিদায় জানাবার জন্য প্রস্তুত হলাম।

রাতে অন্ধকারে ‘Wings of Time’ laser show দেখার লোভ সম্বরণ করতেই হল। কারণ সারাদিনে বলতে গেলে বিশেষ কিছুই খাওয়া হয় নি। আর ঘুরে ঘুরে পা এবং কোমরও জবাব দিয়েছে। সব থেকে বড় কথা এটাই আমাদের সিঙ্গাপুরের শেষ রাত। Mustafa Centre এ shopping তো বলতে গেলে বাকিই থেকে গেছে। আর মুস্তাফার বাইরে ফুটপাতের ধারের বাংলাদেশি বিরিয়ানীও খাওয়া হয় নি। যদিও বলতে গেলে Cable car র unlimited ride বাকিই থেকে গছে, তবু প্রথম দিনের মতোই Monorail র দিকেই পা বাড়ালাম।

(ক্রমশঃ)

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (পর্ব – ৯)

Monorail-এ Imbiah Station থেকে যাত্রা Vivo Cityর পথে। বেশ মজা কারণ আজ আর মেট্রোরেল বদলের সমস্যা নেই। Vivo City থেকে Harbour Front Line  অর্থাৎ Purple Line-এই সোজা যাওয়া যায় Little India তে। ভাগ্যিস টিকিট কাটার আগেই জেনে নিয়েছিলুম। তাই খামোখা China Town, Little India তে না নেমে ঠিকঠাক মতো Farrer Park Station এ নামা গেল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে সেও আরেক অভিজ্ঞতা। রাস্তার ধারে ধারে ঘাসের ওপরই দলে দলে লোকেরা শুয়ে বসে বিশ্রাম করছে। দেখে মনে হয় শ্রমজীবী মানুষ তারা। হয়তো সেভাবে থাকার ঘরও নেই! সারাদিনের পরিশ্রমের পর ক্লান্ত শরীরকে বিশ্রাম দিচ্ছে পথের আশ্রয়েই। হাঁটতে হাঁটতে দেখি বিশাল মাঠের মধ্যে মেলা বসেছে। – ঈদের মেলা। টুক্‌ করে এক চক্কোর মেলায় ঢুকে পড়লুম। নীলের মোবাইলের কভারের খোঁজে – যদি পাওয়া যায়! কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এমন মডেল যে কোন কভারই হয় না!

রাস্তার ধারে বাংলা লেখা – ‘দেশী ভাইয়ের মিনী মার্কেট’ – এই বানানেই। আর সেখানে এমন আশ্বাসও দেওয়া রয়েছে যে ভেতরে ঢুকলে সবরকম জিনিসই পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সে বাংলার হাতছানি উপেক্ষা করেই আমরা এগিয়ে গেলুম মুস্তাফার দিকে। পথে রাস্তায় দীপাবলীর আলোকসজ্জার পাশে নজরে এল বাংলা লেখ ‘শুভ দীপাবলী’। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের বাঙালী আধিপত্য এর থেকেই প্রমাণ পায়।

মুস্তাফায় মূল লক্ষ্য নীলের মোবাইলের জামা আর সোহমের Pokemon খেলনা। খেলনাটা আমার ভাগে। কারণ ভালয় ভালয় 8th level Abacus  শেষ করলে ওর পছন্দ মতো Pokemon দেবো বলে কথা দিয়েছি। সারা মুস্তাফা চষে ফেলে সব রকম খেলনা মিলল, শুধু ওই Pokemon বাদে। আর মোবাইলেরও একই দশা।

আগের দিন শুধু চকোলেট আর চাবির রিং ছাড়া  কিছুই কেনা হয় নি। তাই বিশেষ মানুষজনেদের বিশেষ প্রীতি উপহার তো না নিলেই নয়! এমন কি মা-বাবাদের জন্যেও কিছুই নেওয়া হয় নি। কিইবা নেবো! বুঝে পাই না। অন্ততঃ সাবান তো নেওয়াই যায়। অনেক ঘুরে সাবানের সন্ধান মিলল। আচ্ছা, Deo – Perfume নেবো না! একটা করে নেওয়া হয় আর আরেকজন কারুর কথা মাথায় আসে। নিজের জন্যে কিছু নিলে হয় না! কস্‌মেটিক্‌সের ভীড়ে লক্ষবার ঘুরে ঘুরেও বুঝে পাই না কি যে নেবো। অনেক খুঁজে একটা নেলপালিশ আর একটা লিপ্‌স্টিক নেওয়া গেল। আশাকরি খারাপ হবে না। আর অনেক ভেবে মা-বাবাদের জন্যে নেওয়া হল Vaseline এর বড় ময়েশ্চারাইসার – দুই বাবার নাম করে – সামনেই শীতকাল কাজে লাগবে।

ছেলেরা তখন অনেক ছোটাছুটি করে হাক্লান্ত হয়ে সিঁড়ির ধাপেই বসে পড়েছে। Tiger Balm, Knee Cap সবকিছু সেরে অবশেষে বেরোনো হল খাবারের আশায়। হায় ভগবান! বিরিয়ানী শেষ। কি হবে! রাস্তা পেরিয়ে ‘শ্রী বালাজী’ রেস্তোরাঁ এ গিয়ে দেখা গেল সেখানে শুধু নিরামিষ থালি। বড়বাবুর তো মুখ হাঁড়ি। শেষে অন্য এক রেস্তোরায় গিয়ে ছেলেদের নান ও বাটার চিকেন নেওয়া হল। আর আমরা নিলুম ধোসা আর পুরি সব্জি। এবার সোজা ট্যাক্সি চেপে হোটেল।

(ক্রমশঃ)

 

Posted in kids - Chandrabhal Basu

Guitar

img_0435

Not a tabla, not a sitar

It has a melodious sound

And its called a GUITAR.

 

It varies from Spanish to electric

We can play it with our fingers

Or a tool called Peak;

 

It has distinguishing colour

And six strings

It matches the beat when

A vocalist sings.

 

It is easy to play the guitar and sing

And by playing this you will

Not have any less happiness

Than a King.

 

– Chandrabhal Basu (12 years)

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (পর্ব – ৬)

পরদিন সকালে উঠেই তৈরী হবার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এদিনের গন্তব্য সুন্দরী Sentosa. দিনের প্রধান আকর্ষণ Cable Car. তারও টিকিট আগেই কাটা আছে। আজ আমরা আর নতুন নই মোটেই! প্রথমদিনে Universal Studio ঘুরে রাস্তা সবই চেনা। শুধু Vivo City থেকে Monorail না চড়ে পাশের Harbour Front Station থেকে Cable Car মানে Rope way তে চড়তে হবে।

তিন দিন ধরে একই রাস্তা দিয়ে Kallang এ গেলেও আমার ছাই রোজই রাস্তার ডানদিক, বাঁদিক গুলিয়ে যায়! Outram Park থেকে ট্রেন বদলে Harbour Front এ এসে তো পৌঁছলুম। সেখান থেকে গটগটিয়ে এগিয়ে গেলুম Cable Car Stationএ। ওমা সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আবিষ্কার হল ওই Mail এর E-ticket redeem করাতে হবে সেই Vivo City থেকেই। আমাদের বসিয়ে রেখে সকব তো গেল টিকিট আনতে। ওদিকে বেলা যত বাড়ছে গরমও তত অসহ্য হয়ে উঠছে। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে টিকিট নিয়ে ফিরল যথারীতি মাথা গরম। চুপচাপ সব বকুনি হজম করে ওপরে গেলুম Cable Car চড়তে। ওমা ওই ২৬ তলা লিফ্‌টে ওঠার পর বলে কিনা হাতের ব্যাণ্ড চাই, শুধু টিকিট দেখালে চলবে না! কত্তামশাই আবার নিচে গেল Wrist Band আনতে। আর এ সবই যে আমার অতিরিক্ত ‘Map reading’ এর ফল – সে সুনাম ততক্ষণে কপালে জুটেছে!

Cable Car এ ওঠা বেশ ঝঞ্ঝাট। চলন্ত ডিব্বায় এক লাফে উঠে পড়তে হবে। থামাথামির কোনোও ব্যাপারই নেই। ওরে বাবা রে – কি মুস্কিলে পড়া গেছে! কিন্তু সে ডিব্বা যখন একটু পরেই সমুদ্রের ওপর দিয়ে চলতে শুরু করল – আহাঃ, আহাঃ। চারিদিকে থৈ থৈ জল, আর দূরে দেখা যাচ্ছে সিঙ্গাপুর হারবার। সেখানে সারি সারি জলযান দাঁড়িয়ে। আরে ওটা কি ওই দূরে? ওটাও কি সিঙ্গাপুর! আরে না, না, ওটা ইন্দোনেশিয়া! ও মা! আরে এদিকে যে Sentosa Island এসে গেল!

কি সুন্দর! এতো ওপর থেকে নিচের কটেজগুলো কি সুন্দরই না লাগছে! ওই দেখো কটেজের মাঝে আবার Swimming pool, টলটলে নীল জল। ছোট্ট ছোট্ট পুতুলের মতো মানুষেরা সেখানে জলকেলী করছে। দ্যাখো, দ্যাখো Universal Studio. এই তো দুদিন আগেই ঘুরে গেলুম। এই এসে গেল Sentosa, Imbiah Lookout.  একরাশ বিস্ময়মাখা চোখে এদিক ওদিক চেয়ে প্রথমেই গেলুম Butterfly Park and Insect Kingdom.

সেই লোহার শেকল ঘেরা পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি উড়ে বেরাচ্ছে। ও মা! ওদিকে গাছের আড়ালে ওটা কি! কালো কুচকুচে ময়ূর যে!! গা থেকে আবার গাঢ় নীল রঙের ঝিলিক। ছবিতোলার লোভ সামলানো দায়। এতো কাছ থেকে ময়ূর দেখি নি তো কখনো – মানে এমন খাঁচার বাইরে।ওদিকে আবার সেই ফেলুদার সাবধান বাণী – ময়ূরের ঠোঁটে খুব জোর, একবার ঠুকরে যদি দেয় -। ভয়ে ভয়ে যতদূর সম্ভব কাছে গিয়ে ছবি তোলা হল।

এদিকে দুদিনের ঘোরাঘুরিতেই পা-হাঁটু জানান দিচ্ছে। আবার চিরকেলে লেট-লতিফদের সময়ের সঙ্গে যুদ্ধও চলেছে। তাই তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়লুম মিউজিয়াম দেখতে। সেখানে সেই শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতির জীবনচক্র, রকম রকম লার্ভা, পিউপা …। ওরে বাবা, আবার অন্য সব পোকামাকড়ও আছে দেখি! টারান্টুলার পাশাপাশি আরেকটা পোকা দেখলুম এক্কেবারে অবাক করা! এমন বড় বড় সবুজ পাতার মতো ডানা তার যে কিছুতেই পাতার ভীড়ে তাকে খুঁজে পাওয়ার জো নেই – কোথায় লাগে গিরগিটি এর কাছে! ভাগ্যিস একটু নড়ে উঠল! ইস্‌, মায়ের জন্যে কি যে মনকেমন করছে! এইসব মিউজিয়াম, পোকামাকড় – মা দেখলে কি খুশীটাই না হোতো!

এবারে হল ভর্তি মাউন্টেড বাটারফ্লাই। আহাঃ, কি রঙের বাহার! ‘কোথায় পেলি ভাই এমন রঙিন পাখা; প্রজাপতি, প্রজাপতি” – । আমার তো দেখা আর শেষই হয় না! পারলে সবগুলোকেই ক্যামেরাবন্দী করে রাখি! কেন যে পারি না খুব সুন্দর মনের মতো ছবি তুলতে!

প্রজাপতির রাজ্যের বাইরে উপহারের দোকান। সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি আর রংবেরঙ্গের মিনে করা সব চাবির রিং, কানের দুল, গলার হার, লকেট – দাম এই S$2/3/5। সেখান থেকে দুটো লকেট আর নিজের জন্যে একটা সুন্দর মিনেকরা প্রজাপতি দুল পছন্দ করতেই বেলা কাবার। “তাড়াতাড়ি কর! 4D শো শুরু হয়ে যাবে, তখন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে”। ওরে বাবা! দুদিন ধরে লাইনে দাঁড়াবার খুব অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর না! অবশ্য বকুনি খাওয়াটা আমার ছেলেবেলার অভ্যেস। যে যখন পারে আমাকে বকুনি লাগায় – ওটা না খেলেই চিন্তা হয়, কি হল সব ঠিক আছে তো!

পরপর তিনটে শো। প্রথম হল ‘Journey to the Mysterious Island’ । আজ আর কোনোও চিন্তা নেই। Universal Studio ঘুরে 4D শোয়ের খুব অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। তাই সিটে বসে আগেই পা গুটিয়ে নিয়েছি। জঙ্গলের লতাপাতা ঘেরা পথ দিয়ে যেতে সিটের নিচে ঝুলে থাকা লোহার শিকলের সুড়সুড়ি বা মুখে ছিটকে আসা জলের ছিটায় তাই আজ বেশ মজাই লাগে। কিন্তু আচমকা সিটের পেছন থেকে আসা গদাম করে বর্শার ফলার ধাক্কা – উফ্‌, বেজায় বিরক্তিকর! একে বলে কোমরে-পিঠে ব্যথা! দূর হ’ 4D শো!

এরপরে ‘Extreme Log Ride’। সেখানে গপ্পো তুমি বেশ একটা ছোট্ট বাঁশের টুকরো। সেটা ওপরে যাচ্ছে, নিচে নামছে, উঁচু পাহাড় থেকে খাদে পড়ছে – এক্কেবারে হুলুস্থুল। তবে হুঁ হুঁ বাবা, আর বোকা বানাতে পারবে নি – বলে মিশরের মমির প্রতিশোধ পেরিয়ে এসেছি! এতো সামান্য বংশদণ্ড! ‘আমি কি ডরাই সখী …”।

যা হোক এরপর হলুম গিয়ে Mexican Cow Boy.  এবার আর গাড়ী চড়া নয়। ছোটবেলার সেই ঘুর্ণী-নাগরদোলার মতো ঘোড়ার পিঠে চেপে বসতে হবে – চোখে 3D কালো চশমা আর হাতে বন্দুক নিয়ে। ‘ইন্‌জিরি সিনিমা’র দু পাড়ার মস্তানদের লড়াই। ‘ঘোড়া-সিট’ যথেচ্ছ ঝাঁকুনি দেবে আর সেই ঝাঁকুনি সামলে একহাতে ঘোড়ার রড আর অন্য হাতে বন্দুক ধরে সামনের স্ক্রিনে ফুটে ওঠা নম্বর দেখে গুলি ছুঁড়তে হবে। খেলার শেষে আবার স্কোরকার্ড সহ সবার নাম ও ছবি র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী দেখানো হচ্ছে। নীলবাবু দেখি সেখানে 4th । সোহম আর আমিও বেশ ভালই করেছি। কেবল আমাদের দলপতিমশাই ঝাঁকুনির চোটে বন্দুক-টন্দুক ছেড়ে দিয়ে দু হাতে রড ধরে চুপচাপ বসে ছিলেন!

এরপর ঠিক হল আমাদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ Madame Tussaudsর  Wax Museum দেখতে যাওয়া হবে।আরে সেটা তো এই Imbiah Lookout এই বলছে ম্যাপে। কিন্তু কোথায়? লোককে জিজ্ঞাসা করতে বললে – এই তো নিচে, এদিক দিয়ে চলে যাও। নিচে নেমে দেখি আরে এ তো Nature walk trail। দুর্‌, এখন কে খামোখা হাঁটতে যাবে! যা গরম আর প্যাচ্‌প্যাচে ঘাম। সামনেই দেখি বাস ধরার লাইন।

আমাদের যদিও Unlimited cable car ride ticket কাটাই ছিল, কিন্তু সেই Cable car station টাই বা কোথায়!   Sentosaএ বাপু সব ভাল, কেবল কোত্থাও একটা Help-desk নেই! আর রাস্তায় কোথাও ম্যাপও নেই। এ ভাই সিঙ্গাপুরের ভারি বিচ্ছিরি সিস্টেম! সবাই বুঝি আগে থেকে সব জেনে যাবে! মরুক গে, বাস যখন আসছে চল না হয়  Sentosa Beach এই যাওয়া যাক।

Sentosa Beach এ Fort Siloso।আর আছে  Trick Eye Museum. সব চেয়ে বড় কথা beach আছে।  Adventure Cove Waterparkও দেখা যাবে বেশ!  Sentosa Island-র মধ্যে এই যে বাস – এ হল ফ্রি। যতবার ইচ্ছে যেখানে খুশী যেতে পার। Siloso Point-এ গিয়ে কিন্তু এক্কেবারেই হতাশ হলুম। Waterpark এবং সমস্তরকম watersports ‘Haze’-র জন্যে বন্ধ। ওদিকে Fort Siloso তেও কোন এক Birthday Party চলছে বলে সেও বন্ধ।

লিফটে করে এগারোতলা উঠে ‘Fort Siloso Skywalk’s viewing platform’-এ তো পৌঁছনো গেল। সেখানে কাঁচের তৈরী floor. তোমার বুকের পাটা যে কতখানি, হবে তার পরীক্ষা। ওই কাঁচের ওপর দাঁড়ালে নিচে তাকালে দেখা যাচ্ছে রাস্তা-গাছপালা-মানুষ – সেই রিয়া-রিম্পার কথায় ‘ম্যাগির বাড়ী’র মতো। আর তার পর মুহুর্তেই মনে হবে ‘ওরে বাবা শরীরের ভারে কাঁচ যদি ভেঙে যায় – তাহলে ‘পপাত চ মমারো চ’ -। সেই Skywalk Trail ধরে সবে একটু এগিয়ে গিয়েছিলুম দুই ছেলে নিয়ে ‘আমি দি গ্রেট’ – সঙ্গে সঙ্গে বকুনি। একে পায়ে ব্যথা, তারওপর অকারণে দেরী করার কোনও মানেই হয় না।

কাঁচুমাচু মুখ করে নিচে নেমে এবার এগোই beach-র পথে। কিন্তু সেখানেও ব্যথা পায়ে বালিতে হাঁটা দুঃসহ হয়ে ওঠায় করুণ মুখে আবার বাসের লাইনে এসে দাঁড়ালুম। বলি একবার cable car  চড়লে হয় না! টিকিট ও তো আছেই। এদিকে পেট তো চুঁইচুঁই। বাস আসতে দেরী দেখে ওখানে Super Market থেকে স্যাণ্ডউইচ আর কাপ নুডুলস দিয়ে পেটের ছুঁচোগুলোকে থামানো গেল।

এখানে আরেক মুশকিল কোত্থাও খাবার জল পাওয়া যায় না। মানে আগের দিন Universal Studio তে যেমন প্রচুর জলের কল ছিল যেখান থেকে বোতলে ঠাণ্ডা জল ভরা গিয়েছিল, এখানে জল মানেই কিনতে হবে। আর আধা লিটার জল মানে S$2 অর্থাৎ কিনা একশ টাকা। গরীব দেশের মানুষ আমরা। তাই যথেষ্ট গায়ে লাগে বই কি।

এদিকে আসার পথে আমাদের প্রায় এক ঘন্টা Harbour Front এ বসিয়ে বাসুসাহেব যে Vivo City তে টিকিট আনতে গিয়েছিলেন, আর আমরা গরমে গলদ্‌ঘর্ম হয়ে টেনশনে অস্থির হচ্ছিলুম তখন বাবু টিকিটের সঙ্গে সঙ্গে নিজের জন্যে Crocodile Tee-Shirt কি্নছিলেন। এবার Siloso Point এ বাস ধরার তাড়ায় সেই বিখ্যাত প্যাকেটটি পড়ে রইল ওই Supermarket র টেবিলের পাশে। ভাগ্যিস বাস ছাড়ার আগে সেটা খেয়াল হয়েছে। ড্রাইভার সাহেবকে অনেক তুতিয়ে পাতিয়ে বাস দাঁড় করিয়ে অবশেষে সেই প্যাকেট উদ্ধার হল। প্যাকেট হারানোর বকুনিটা অবশ্য নীলের ভাগ্যেই জুটল। খিদের মুখে সামনে খাবার পেয়ে হাতে ধরা প্যাকেটখানি দায় ও দায়িত্ব সে পুরোই হজম করে ফেলেছিল।

আর এদিক সেদিক ঘুরে সময় নষ্ট নয় – এবার বাসে চড়ে সোজা Universal Studio চত্তরে S.E.A. Aquarium দেখতে।

(ক্রমশঃ)

Posted in Uncategorized

প্রথম প্রবাসে (পর্ব – ৫)

Night Safary পৌঁছে দেখি বিরাট লাইন। আমাদের টিকিট রাত সওয়া আটটার। অনেক দেরী। নিশ্চয় এটা আগের শো-এর ভীড়। গেটের মুখে দেখি একজন লোক তার পোষা পেঁচাটিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের দেখাদেখি আমরাও সেই পেঁচার সঙ্গে সপরিবারে ছবি তুললুম। ঠিক হল ভেতরে ঢোকার আগে কিছু খেয়ে নেওয়া হবে। ওরে বাবা, ওই ‘কিছু খাওয়া’টাই হল এ দেশে মস্ত সমস্যা। একটু খুঁজে একটা KFC তে যাওয়া হল। সেখানে বাচ্ছাদের Character Party চলছে। সমস্ত টেবিলই ছোট্ট ছোট্ট Cinderella, Spiderman, Batman ও তাদের মা-বাবাদের দখলে। অতি কষ্টে একটা টেবিল জোগাড় করে Chicken Burger আর Cold Drinks দিয়ে পেটপুজো সারা হল।

সেখান থেকে বেরিয়ে River Safaryর গেট পেরিয়ে আবার Night Safary র লাইন। উরিব্বাস, সে কি লাইন! ততক্ষণে বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে। সেই আঁকাবাঁকা বাঁশের ঘেরাটোপে গলদ্‌ঘর্ম হয়ে কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে! সাপসিঁড়ি যেন ফুরোয় না! প্রায় এক-দেড় ঘন্টা অপেক্ষার পর সাফারির ট্রামে বসা গেল। চারদিক খোলা ট্রাম আর অন্ধকার জঙ্গল। একটু যে গা ছমছম না করছিল বলা যায় না। মানুষের সৃষ্টি কৃত্রিম জঙ্গল – সাতটা ভাগে ভাগ করা। কোথাও আফ্রিকান সিংহ, কোথাও ভারতীয় হাতি। সেখানে দূরে দেখা যাচ্ছে কৃত্রিম জ্যোৎস্নাস্নাত হরিণের পাল। ট্রামের সফর খুব বেশীক্ষণের নয়। সফরের শেষে আছে Animal Show. সেখানে গা ছমছম করা অন্ধকারে Noctornal Animals বা রাতের পশু – Otter, Rattle Snake, পেঁচা, যখন পাশ ঘেঁসে চলে যায় বুকটা শিরশির করে ওঠে।

 

এতেও মন না ভরলে উৎসাহী দর্শকেরা The Leopard Trail, Fishing Cat Trail বা Wallaby Trail ধরে পদচারণা করতে পারে। কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি আর প্যাচপ্যাচে ঘাম, বিশেষতঃ শেষের দীর্ঘ লাইনের বিরূপতায় আমরা সোজা বাইরের পথ ধরলুম।

 

          তবে বেরোনোর মুখে বোর্ণিয়ো উপজাতির ‘Thumbuakar Dance’ র আগুনের খেলা আমাদের গতিরুদ্ধ করে দিল। ওদিকে ট্যাক্সির লাইনে ভীড় হয়ে যাবে, দিনের শেষে হোটেলে ফেরার তাড়া, পরের দিনের Sentosa Island-এর হাতছানি। তাই আগুনের খেলাকে মাঝপথেই ক্ষান্ত দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে এগিয়ে গেলুম ট্যাক্সির লাইনে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ট্যাক্সির ঠাণ্ডায় আহঃ প্রাণটা যেন জুড়োলো। ছেলেদের হোটেলে ঢুকিয়ে আমরা দুজনে গেলুম সেই গত রাতের হোটেল থেকে Chicken Fried Rice আনতে। খাওয়ার পালা চুকিয়ে শুতে শুতে বেশ রাত হয়ে গেল। যদিও ভারতীয় সময় অনুযায়ী তখন আমাদের ‘সবে সন্ধ্যে’। “এই রে কাল সকালে সময় মতো ঘুম ভাঙ্গবে তো”!

(ক্রমশঃ)