Posted in Uncategorized

আমি কে?!

ছোটবেলা থেকে বড়বাবুর ভারি সমস্যা। তিনি কে? একে তো তাঁর নামের ছড়াছড়ি। জন্মাতে না জন্মাতে দাদাই নাম ঠিক করে ফেলেছে ‘নীল’। আর কেন যে নীল তার আবার প্রায় এক পাতা জোড়া যুক্তি আর ব্যাখ্যা। বাড়ীতে দাদু আবার সে নামের সঙ্গে ‘মাধব’ জুড়েছেন। তাঁর শিবঠাকুরের চেয়ে কেষ্টবাবুর ওপর টানটা বেশী। তাই নাম হয়ে উঠেছে নীলমাধব; কখনও ছোট করে মাধব। কখনও আদর করে শুধুই ‘ভাইয়া’।

দিয়া আবার খুঁজে খুঁজে গালভরা নাম বের করেছে – ‘রুদ্ররূপ’ – মায়ের অত্যধিক ‘ঝিন্দের বন্দী’ প্রীতির স্মরণিকা আর কি। এদিকে যেদিন থেকে রুদ্ররূপ নাম ঠিক হয়েছে ছেলের মেজাজ গেছে বিগড়ে। অমন ঠাণ্ডা-শান্ত ছেলে জুড়ে দিয়েছে তুমুল কান্না। কিছুতেই থামানো যায় না। পাড়া-প্রতিবেশী সুদ্ধু অস্থির! ছুটে আসে ছেলে ভোলাতে!

তার ওপর আবার আদরের শতেক নাম। দিদি বলে ‘কুট্টুস’, দিয়া বলে ‘বাব্‌লা’, বাবা বলে ‘বাতলাল’, ‘বন্তু’। গান গেয়ে গেয়ে ঘুম পাড়ায় ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, বন্তু গেল ক্ষেপে’ -। আর মায়ের আদরের ডাক ‘বিবু’।

তখন এই বছর দেড়েক বয়স হবে। দুপুরে এক ছিলিম ভাত-ঘুম দিয়ে উঠে বাবু ‘ছানা-কলা’ খেয়ে ঠাম্মার সঙ্গে খেলা করেন। একদিন দেখি সারা দুপুর বলে চলেছে – “আমি কে? বিবু”। “আমি কে? বিবু”। অর্থাৎ নাম মুখস্ত চলছে।

বেশ চলছিল। মুশকিল হল পুণেতে এসে। একদিন ছেলের কি রাগ! “কেন আমার নাম বসু হল! আমার নাম দেশপাণ্ডে, কুলকার্নী দিতে পারলে না!” যত বলি “ওরে আমরা যে বাঙ্গালী। বসু তো কত ভাল। এই দ্যাখ না নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, আচার্‍্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু, দাদাই-এর দাদু বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু – সবাই সারা পৃথিবী বিখ্যাত”। ছেলের সে রাগ কিছুতেই পড়ে না।

তখন ওর একটা ছোট্ট ধূতি ছিল। দাদু রোজ মাল্‌কোচা মেরে সে ধূতি পরিয়ে দিতেন। ছেলে ধূতি পরে কাঁধে গদা নিয়ে বিকেলে খেলতে নামতো। পাড়ার ছেলেরা জিজ্ঞাসা করেছে “তোমার নাম কি?” উনিও বলে এসেছেন, “আমার নাম হনুমান”। একদিন বিকেলবেলা ছেলের খেলা দেখতে নিচে নেমেছি। ও মা দেখি আমার অমন ভাল ছেলেকে সবাই ডাকাডাকি করছে ‘হনুমান’ বলে। কি আপদ! আমাদের বাঙ্গালীদের কাছে হনুমান বলা মানে যে গাল পাড়া! ‘পাজী ছেলে’, ‘বাঁদর একটা!’ ‘হনুমান কোথাকার!’ রীতিমতো অপমান! তা বন্ধুদের দোষ কি! ছেলে যেমন নাম বলেছে।

একদিন নিচে থেকে রাগে গর্‌গর্‌ করতে করতে ছেলে বাড়ী এল। “কি হয়েছে রে?” কিছুতেই বলে না। শেষে অনেক সাধ্যিসাধনার পর বললে, “আমায় ওরা হনুমান বলে কেন?” “কি করবে বাবা; তুমিই তো ওদের বলেছ তোমার নাম হনুমান”। “কেন ওরা আমায় কৃষ্ণ বলতে পারে না?”! বোঝো কাণ্ড! নীল নয়, রুদ্র নয় – তখন উনি কৃষ্ণ অবতার! কে কি করে বুঝবে বাবা! শুধু কি কৃষ্ণ! সেই ধূতিখানা আবার শাড়ীর মতো জড়িয়ে মাঝে মাঝেই বলতো “আমি রাধা”।

কত বড় বয়সেও যে এরকম পরিচয় বিভ্রাট ঘটেছে! তখন চলছে হ্যারি পটারের যুগ। আমার কলেজে সাল্‌ভি স্যার ওর ঐ চশমা পরা মুখ দেখেই বলতো “আরে হ্যারি পটার!” আর ছেলেও তাতে রেগে যায়। আমি ভাবি আহা এখন বোধহয় বড় হয়ে গেছে, তাই লজ্জা পায়। ও মা, ছেলে বলে কিনা, “সাল্‌ভি আঙ্কেল আমায় হ্যারি পটার বলে কেন? ছোটা ভীম বলতে পারে না!”

তবে সেবার আমি যে কি বিপদে পড়েছিলুম উফ্‌!!! সবে ছেলেকে চান টান করিয়ে ইস্কুলের জামাকাপড় পরাতে যাব। দেখি মুড খুবই ভালো, বেশ হাসি হাসি মুখ। বললে, “বল তো আমি কে?” “কে আবার, তুমি তো আমার বিবু”। “না হল না”। “তুমি নীল, তুমি রুদ্ররূপ”। “না, না, হল না”। সেই কাকেশ্বর কুচকুচের মতো করে যেন ছেলে মাথা নাড়ে – ‘হয় নি, হয় নি, ফেল’। “তবে তুমি কৃষ্ণ”। “উঁহু”। “তবে বুঝি হনুমান। আচ্ছা, রাধা”। যাই বলি, বলে “না”। এবারে ছেলের মেজাজের পারা চড়ছে। মুখের হাসি ক্রমশঃই কান্নায় পরিণত হচ্ছে। আর মায়ের কল্পনা শক্তিও তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। “তবে কি তুমি রাবণ”? (মাঝে মাঝে রাবণও হোতো কি না! তবে রামচন্দ্র হয় নি কোনোদিনই।)  এবার চূড়ান্ত পর্যায়। রেগে বলে- “আমি জামা প্যান্টুও পরবো না, ইস্কুলেও যাবো না”। কি কেলো রে বাপ্‌! শেষে বুদ্ধি বের করি – “আচ্ছা বল দেখি, তুমি কে? তুমি আমাকে বলে দাও। তবে তো আমি জানবো”। ঘোষণা হল – “আমি হিরণ্যকশিপু”।

কোনোও মা কি স্বপ্নেও ভাবতে পারে তার সাধের বাছা ‘ভক্ত পেহ্লাদ’-কে ছেড়ে তার বাবাটিকে পাকড়াও করবে!!!

Posted in Uncategorized

হারালো হারালো বুঝি হারালো

আমাদের এ বাড়ীতে হারিয়ে যাওয়াটা একটা বিলাসিতা -। মানে এই জিনিসপত্র আর কি। সব সময়ই এটা হারাচ্ছে, ওটা হারাচ্ছে। হ্যাঁ তা সে শুধু আমারই হয়েছিল। বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ী পা দিয়ে পুরো হারিয়ে গেলুম। সারা বাড়ীটাই শুধু দরজা আর দরজা। কোন দরজা দিয়ে কোন সিঁড়ি বেয়ে কোন ঘরে যে পৌঁছে যাচ্ছি কিছুতেই ঠাওর করতে পারি না। মোটেই মনে কোরো না সেসব অন্দরের দরজা! কম সে কম নটা দশটা দরজা দিয়ে এক্কেবারে বাড়ীর বাইরে যাওয়া যায়! লক্ষ্‌নৌ ভুল্ভুলাইয়ার মিনি সংস্করণ আর কি।

আর জিনিসপত্র – সে আর কি বলবো। কোনও ছুটির দিন যদি মনে হয়েছে – আহঃ, আজ বিশেষ কাজ নেই, একটু আরাম করা যাবে। অমনি দেখবে ঠিক কোনও না কোনও ভীষণ দরকারি জিনিস হারিয়ে বসে আছে। এই তো এখানেই ছিল! কালই তো দেখেছিলুম মনে হচ্ছে। নির্ঘাত বাপী কোথাও গুছিয়ে রেখেছেন। ডাক পড়ল বাপীর। আজকাল আবার তার সঙ্গে ছোটবাবু যোগ দিয়েছেন। কোনো জিনিস তাঁর পছন্দসই হয়েছে কি সোজা খেলনার স্তুপে। তখন একদিনের ছুটি ভোগ মাথায় উঠে তিনদিন ধরে গরু খোঁজা চলতে থাকে। সে ব্যাটাও বেরোবে না আর বাপীও ছাড়বেন না। এমন কি ছোটবাবুকে বাবা বাছা করে, “ভাই একটু মনে করে দেখো তো, কোথাও দেখেছ কি?” অসীম ধৈর্য্য বাপীর।

শুধু বাড়ীর জিনিসই নয়। খেলতে গিয়ে আমাদের ব্যোম্‌ভোলা বড়োবাবু চশমাটায় হারিয়ে ড্যাং ডেঙ্গিয়ে চলে এলেন বাড়ী। কোথায় নাকি খুলে রেখেছিলেন, এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না! তার কোনও বিকার নেই। পাই নি, কি করব – ব্যস্‌ দায়িত্ব শেষ। আমি রেগে মেগে চিৎকার চেঁচামিচি করে অস্থির। বাপী কিন্তু নির্বিকার। এক হাতে টর্চ আর এক হাতে ছোটবাবুকে পাকড়াও করে সার্চ পার্টি বের করে ফেললেন। নীচে তখনও নীলু, নোয়েল, আকাশের দল খেলা করছে। বাপীর নেতৃত্বে শুরু হল চিরুনী তল্লাসী। এবং – শেষ পর্যন্ত সেই হারানিধি হাতে করেই বাড়ী ফিরলেন।

এ হেন বাপী সে একবারই বেজায় কাবু হয়েছিলেন। আর আমিও সেবার বেদম্ম ভয় পেয়েছিলুম। নতুন বউ সবে শ্বশুরবাড়ী পা দিয়েছি। তা ওই ভুল্ভুলাইয়ার গোলকধাঁধা পেরিয়ে আমায় বসানো হয়েছে শাশুড়িমার খাটের ওপর। ঘর ভর্তি প্রচুর লোক। কুচোকাচারা তো আছেই, তাছাড়াও দুই-তিন পিসিমা দুই মাসিমণি সব বাঘা বাঘা লোকজন। মেজোমাসিমণি বেচারি কোন কারণে মায়ের আলমারীটি খুলেছেন। অমনি কোত্থেকে তাঁর সাধের বোনপো এসে সরো সরো করে দিয়েছে এক ঠেলা। ব্যাস্‌ আর যায় কোথায়! মাসিমণির হাত থেকে ঠং করে আলমারীর লকারের চাবিটি গেল পড়ে। তারপর খোঁজ খোঁজ…।

মা সবে পুজোয় বসেছিলেন। পুজোপাট সব মাথায় উঠল। বিয়েবাড়ীতে লকারের চাবি হারালে চলে! ওদিকে ভয়ে তো আমার মুখ চুন। বাড়ীতে পা দিতে না দিতেই কি অলক্ষুণে কাণ্ড! খানিকপরে বরমশাইয়ের নজর পড়ল আমার ওপর। শুকনো মুখ দেখে জিজ্ঞাসা করল “কি হয়েছে?” আমিও চুপ। “মায়ের জন্যে মন কেমন করছে? বাড়ীর কথা মনে হচ্ছে?” অনেক সাধাসাধির পর বলি, “চাবিটা পাওয়া যাচ্ছে না যে” – “ও এই ব্যাপার। দূর দূর, বাদ দাও ওসব। ও তুমি তার কি করবে? ও কিছু নয়”। “কিছু নয় কি গো! আচ্ছা ডুপ্লিকেট নেই?”

ডুপ্লিকেট আছে কাঠের আলমারীর ড্রয়ারে। যাঃ, কি যে হল। কাঠের আলমারীতেও চাবি লাগছে না ছাই। এদিকে আমার তো আত্মারাম এক্কেবারে খাঁচাছাড়া। ইতিমধ্যে বাড়ী থেকে আমার সব বোনেরা আসায় আমি তো সরে পড়েছি ও ঘর থেকে। পরে শুনলুম জামাইবাবুকে দিয়ে লোক ডাকিয়ে কাঠের আলমারীর লক্‌ ভাঙ্গিয়ে ডুপ্লিকেট বার করা হয়েছিল।

আর সে হারানিধির কি হল! হতচ্ছাড়া চাবি খুব সন্তর্পণে আলমারীর মধ্যেই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়ে গেছে। বহু বছর পর অবধিও বহু বার কোনো জিনিস বার করতে গিয়ে তিনি টুংটাং করে জানান দিয়েছেন। কিন্তু আলমারী খালি করে ফেলেও আজ অবধি তার হদিশ মেলে নি।

Posted in Uncategorized

দ্বম্‌-দ্ব (নিপাতিত)

অভিধানে যে কটি বেয়াড়া শব্দ আছে তার মধ্যে এক নম্বরে থাকতে পারে দ্বন্দ্ব শব্দটা। ভেবে দেখো একদিকে বলছে যুগল বা জোড়া আবার আরেকদিকে বলছে বিভেদ বা কলহ। তা আজকের গপ্পটা এই দ্বন্দ্ব নিয়েই।

এই ধর আমাদের ‘কুহু-কেকা’। বেচারারা সেই কেজি থেকে আর ক্লাস টেন অবধি এক সঙ্গে এক সেকশনে পড়ে এল। অমন কড়া নিয়মতান্ত্রিক সিস্টার রোমানাও একটিবারের জন্যেও ওদের আলাদা করতে পারেন নি। চেষ্টা অবশ্য করেছিলেন। কিন্তু মাসীমা-মেসোমশায়ের অকাট্য যুক্তির কাছে ওনাকেও নতি স্বীকার করে নিতে হয়েছিল। তাতে বেচারা কুহু-কেকাও কম ঝামেলায় পড়ে নি। অনেক দিদিরাই ওদের পাশাপাশি বসা নাকচ করে দিয়েছিলেন, চিনতে না পারার ভয়ে। অনেকে আবার এক অভিনব উপায় বের করে নিয়েছিলেন – পড়া ধরতেন “কুহুকেকা বল”। আর ওদেরও অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল যার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে লক্ষ্মী মেয়ের মতো সে এবং একমাত্র সে-ই উঠে পড়া বলত। আচ্ছা, এমন যদি ওরা করতে পারত যে “কুহুকেকা বল” শোনামাত্রই দুজনে একসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বেশ দুলে দুলে সুর করে পড়া বলতো! আসলে আমরা নেহাতই পবিত্র শিশু ছিলুম কিনা তাই এ হেন বদ্‌বুদ্ধি ওদের মাথাতেও কোনদিন আসে নি মনে হয়। আমরা যারা রোজ দেখতুম তারা কিন্তু দিব্যি বুঝতে পারতুম কোনজন কুহু আর কে কেকা।

কিন্তু ‘কুহুকেকা’র চক্করে পড়ে বেচারাদের নিজেদেরই ব্যক্তিত্ত্ব বিভ্রাট হবার জোগাড়। তখন আমরা ক্লাস টেনে পড়ি। তা যুগলমূর্তি তখন ‘এ’ সেকশনে। কুহু আমার পাশেই বসে। অর্থাৎ আমি তখন কুহুকে অন্ততঃ ‘বেশ চিনি’। ভুল হবার কোনও প্রশ্নই নেই। তখন স্কুলে দুই পিরিয়ডের মাঝে সর্ট-ব্রেক চালু হয়েছে। অর্থাৎ মেয়েরা যে যার মতো ক্লাস থেকে ভাগল্‌বা। চারতলার টেন বি থেকে আমাদেরই কোনো এক সহপাঠিনী এসে কেকাকে জিজ্ঞাসা করল – “এই তুই কুহু তো”। কেকাও দিব্ব্যি মাথা নেড়ে সম্মতি জানানোয় সে তো তার বক্তব্য পেশ করে চলে গেল। এদিকে আমি পড়েছি মহা ফাঁপরে। স্পষ্ট দেখছি কেকা আর বলল কিনা কুহু!!! খপ্‌ করে ধরেছি। “অ্যায়, তুই কেকা না!” কেকাও ভালমানুষের মতো মুখ করে বললে, “হ্যাঁ তো”। “তবে যে বললি বড়ো তুই কুহু?!” আসামীকে হাতে নাতে ধরার এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে! সেই শুনে বেচারি কেকা ছুটল সেই মেয়েটার পিছনে – “ওরে আমি কুহু নই, আমি কুহু নই, আমি কেকা”। উফ্‌, কি বিভ্রাট। ভ্রান্তিবিলাস ও হার মেনে যাবে।

‘কুহু-কেকার কিস্‌সা’ তো হল – এবার আসা যাক ‘রুমকি-চুমকির কাহিনী’তে। চুমকি প্রথম আমার সঙ্গে এক সেকশনে এল ক্লাস ফোরে। ছট্‌ফটে হাসিখুশী মেয়ে। বেশ ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। রুমকি তখন অন্য ক্লাসে। সে ভারী গম্ভীর মানুষ। অত্যন্ত এটিকেট দুরস্ত এবং বেশ রাগীও বটে। তার সঙ্গে মুলাকাৎ বেশ পরে। ‘রুমকি-চুমকি’ কিন্তু বেশীরভাগ সময়ই আলাদা সেকশনে পড়ে। তখন আমরা ক্লাস সেভেনে। আরতিদি আমাদের অঙ্ক করান আর তার সঙ্গে নীতিশিক্ষা। সে বছর রুমকি-চুমকি ভাগ্যক্রমে একই সেকশনে। ইস্কুলে তো আমাদের মার্জিত, ভদ্র, বন্ধুবৎসল, ন্যায়নিষ্ঠ পবিত্র শিশু গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। সে বয়সে হামেশাই আমাদের বন্ধুতে বন্ধুতে আড়ি হতো, কথা বন্ধও হতো। বেশীরভাগ সময় নিজেরাই ভাব করে খেলতুম – বন্ধুদের ওপর আর কতক্ষণ রাগ করে থাকা যায়! নেহাত পরিস্থিতি হাতের বাইরে গেলে সিস্টার বা নীতিশিক্ষা দিদিমণি ভাব করানোর মধ্যস্থতা করতেন। ‘কুহু-কেকা’ দুজনে যেমন এক মন, এক প্রাণ; ‘রুমকি-চুমকি’র সেরকম রাগারাগী, ঝগড়া। নিজের মায়ের পেটের দুই বোন, অথচ দিনের পর দিন তারা কেউ কারুর সঙ্গে কথা বলে না। আরতিদির সেদিন দুটো ক্লাস। টিফিনের আগে নীতিশিক্ষা আর দুপুরে টিফিনের পর অঙ্ক। তা নীতিশিক্ষা ক্লাসে সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ‘ক্ষমাই পরম ধর্ম’ আলোচনা হচ্ছে। কোনও এক নালিশকুটি মহাপ্রাণ দিদির কানে তুলে দিয়েছে রুমকি আর চুমকি দুজনে কথা বলে না। ব্যস্‌ , আর যায় কোথায়। বেশ একচোট বকুনির পর দিদির হুকুম – “শুভস্য শীঘ্রম্‌। আজই টিফিনের সময় তোমাদের দুজন কে কথা বলতে হবে। এ কি। বাড়ীতে মা কত কষ্ট পান ভাবো তো। আর টিফিনের পরের পিরিয়ডে এসে যেন শুনি কথা হয়েছে দুজনের”। দুজনেই তখন গম্ভীর লাল মুখে তখনকার মতো বসে পড়েছে আর পরস্পরের অস্ত্র শানাচ্ছে। ভাবখানা এই – আচ্ছা, দেখে নেবো।

দুপক্ষেরই বন্ধুরা রয়েছে রেফারির ভূমিকায়। আর আমরা বাকীরা সব উত্তেজিত জনতা। টিফিনের পর অঙ্কক্লাসে এক্কেবারে টান টান উত্তেজনা। কি হল দ্বন্দ্বযুদ্ধের ফলাফল। দুই রথী বেশ গম্ভীর। আর সঙ্গীর দলও চুপচাপ। দিদি ক্লাসে ঢুকেছেন; প্রথম প্রশ্ন – “রুমকি চুমকি কথা বলেছে?” দুই যুযুধান এক্কেবারে নীরব। তবে এটিকেট দুরস্ত রুমকির ততোধিক এটিকেট দুরস্ত বন্ধু পারলে তখনই বদলা নেয় বন্ধুর অপমানের। সে আর থাকতে না পেরে বলেই ফেলল – “দিদি রুমকি কথা বলেছিল, কিন্তু চুমকি উত্তর না দিয়ে মুখ বেঁকিয়ে চলে গেছে”। বেচারি চুমকি। এরপর অপরাধীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই প্রচুর বকুনি শুনতে হল। বকুনির ঝোঁক একটু কম হলে অবশেষে দিদি জিজ্ঞাসা করলেন- “আচ্ছা বেশ, তা রুমকি কি এমন কথা বলেছিল যে চুমকি উত্তর দেয় নি?” তড়িঘড়ি নীতিবাগীশটি বললে –“রুমকি চুমকিকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তোমার নাম কি?’” নিজের সহোদরার সঙ্গে বলার এর চেয়ে ভাল কোনো কথা রুমকি ভেবে উঠতে পারে নি। আর এই কথা শুনে শুধু ক্লাস সুদ্ধু মেয়েরা কেন, চুমকির মতোই দিদির মুখেও আর বাক্যস্ফুর্তি হয় নি।।

 

Posted in Uncategorized

বৌমা ষষ্ঠী

সেদিন Whatsapp  এ একটা ছবি এল – বাড়ীর বৌমা ইয়া বড়া এক কাঁসার থালায় ভাত ও চারপাশে থরে থরে বাটি সাজিয়ে খেতে বসেছে আর বেচারি শ্বশুর মশাই তাল পাতার হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করে চলেছেন – আর ছবির পাশে caption ‘বৌমা ষষ্ঠী, ট্যারা হয়ে যাবে শাশুড়ি জামাই’ –।

ভাবলুম তা কেন হবে! আমার তো তাহলে বৌমা প্রতিপদ থেকে এক্কেবারে পঞ্চদশী হবার কথা। আর তাই তে তো জামাই এর শাশুড়ি অর্থাৎ কিনা আমার মাতৃদেবী রীতিমত আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেছেন।

এই আঠারো বছরে আমি বাপীর ওপর কি রাজত্বটাই না চালিয়েছি। বৌমা কলেজে পড়াতে যাবে, বাপী চললেন বাসে করে কলেজের দোরগোড়া অবধি পৌঁছে দিতে। আবার কেলাস শেষ হলে সাঙ্গে করে বাড়ী নিয়েও এসেছেন। বিদ্যেদিগগজ ইউনিভার্সিটি যাবে, সেই বাপীরই ডিউটি পৌঁছে দেবার। খেতে বসলে আগেভাগেই পাখা চালিয়ে দেওয়া বা কলসী থেকে গড়িয়ে ঠান্ডা জলের গেলাস এগিয়ে দেওয়া এ সব বলার অপেক্ষা রাখে না।

শুনেছি কোন কোন বাড়ীতে নাকি বিয়ের পরও বৌ তার বাবার কাছ থেকে হাতখরচের টাকা নেবে শুনলে পতিদেবতাটির প্রেস্টিজে লাগে। তা আমার বাপু সাফ কথা – তোমার যদি মনে হয় এবার থেকে তুমি আমায় হাত খরচা দেবে দাও না কেনে আমি কি বারণ করেছি, কিন্তু খামোখা আমার রোজগারে চোখ দিওনি বাপু! বিয়ে যখন হয়েছে সম্পর্ক বেড়েছে। সুতরাং আয় বৃদ্ধি হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। বাবা যা দেবার বাবা দেবে তো বটেই, বাপীও যদি কিছু দিতে চান – ।মোটেই আপত্তি নেই। এ হেন অঙ্কের যুক্তির সামনে আর কোনও কথা চলে না। আমার হিসাব শাস্ত্রজ্ঞ পতিদেব প্রচুর ডেবিট-ক্রেডিট কষে রায় দিলেন “ছোটদের হাতে টাকা পয়সা দিতে নেই”।“কে ছোট! অ্যাঁয়, বলি ছোটটি কে?” “কেন তুমি!” হুঁহ। এরপর থেকে আমদানিটা একটু অন্য পথে হয়েছে। পাঁচ টাকা চাইলে বাবুর কাছে কোনদিন পাওয়া যায় নি তবে বদলে দুশো পাঁচশো টাকার গিফট মিলেছে। কি জানি বাপু এ কেমন হিসেব। যাক গে যাক, আমার ওতেই চলবে।

বাপী কিন্তু পাক্কা ব্যবসায়ী মানুষ। ওনার হিসেবটা এক্কেবারে আলাদা। নতুন বৌএর পিছু পিছু বাড়ীতে নতুন কম্পিউটার এল। তার আগে ব্যবসা সংক্রান্ত চিঠি টাইপ করাতে বাপীকে বাইরে যেতে হোতো। এখন যখন বাড়ীতেই কম্পিউটার বাড়ীতেই সুন্দর টাইপ করা চিঠি পাওয়া যেতে পারে। তাতে লাভ কিন্তু আমারই। চিঠি টাইপের সুবাদে একটু একটু করে MS Word রপ্ত হতে লাগল। ওদিকে আবার বাপীর কাছে কোন payment এলেই আমার ডাক পড়ে – ‘এটা নেপালের; এটা ভুটানের’। নেপাল-ভুটানে কাজে গেলেও আমার পছন্দসই জ্যাম, জেলী, স্কোয়াস আসে। ফলে আমার আমদানি বেড়েই চলে।

হিসেব যখন হচ্ছেই তখন মায়ের প্রসঙ্গই বা বাদ থাকে কেন! আজ জয় মঙ্গলবার, কাল নীলষষ্ঠী – টুকটুক করে বেহালায় যান আর আমার কাপড়ের আলমারী বোঝাই হতে থাকে। তার ওপর স্বপন – মায়ের ‘পোষা’ স্যাকরা। আজ জন্মদিন কাল বিয়ের তারিখ ছোট ছোট আংটি, কানের দুল -। ভালোই রোজগার!

অকাল কুষ্মাণ্ড বউটি। বছরে একদিন তার কাজ করার ইচ্ছে হয়। একদিনেই পুরো ছাদ বোঝাই কাপড় কাচা, মাড় দেওয়া। তারপর আবার শুকনো হলে ইস্ত্রি পর্ব -। বাপী শাড়ীটা একটু ধরে দিন না। টানাটানি করে সোজা করতে হবে। দু চারটে করার পরই বাপী রায় দিলেন – “যাও যাও, এসব তোমার কর্ম নয়। আমি করে দিচ্ছি”। আমি তখন মহানন্দে ঠ্যাং নাচিয়ে নাচিয়ে বই পড়ছি; আর বাপী গলদ্ঘর্ম হয়ে আমার শাড়ী ইস্ত্রি করছেন।

বাপী আমাদের মুস্কিল আসান। সকালে উঠেই ঘোষণা করে দিতুম “আপনার আজকের হোম ওয়ার্ক”। কোন ব্যাগের চেন কেটে গেছে, কোন বাসনের হ্যাণ্ডেল লগ লগ করছে, কোন কলে জল লিক করছে, মিক্সি চলছে না, washing machine খারাপ  – প্রথমে যন্ত্রপাতি নিয়ে বাপী নিজে বসতেন মেরামতির কাজে, তারপর ফোন আর তারও পর ভাঙ্গা ছেঁড়া জিনিস বগলে করে বাপী ছুটতেন ‘বসন্ত’,  ‘নারাণ’, ‘সুরেশ’, ‘নরেশ’ তাদের সন্ধানে। তারপরও বকুনি “ওই দেখো ঠিক দুপুর বারোটা না বাজলে বেরতে পারেন না”।

কলেজে গিয়ে উদ্ধার করে দিচ্ছে বৌমা। নোট তৈরি করতে হবে – একটু টুকে দিন না। বড্ড মাথা ধরেছে – আমৃতাঞ্জন, টাইগার বাম নিয়ে বাপী রেডি। উলটে আবার নালিশ – “উফ চোখ জ্বালা করছে। আর দিতে হবে না, থাক”।

দোকান থেকে কোনও জিনিস কিনে আনলে প্রতিটা জিনিস ধৈর্য ধরে একটি একটি করে দেখা তারপর সেগুলো আবার সুন্দর করে গুছিয়ে পাট করে রাখা; জিনিসের ভারে উপচে পড়া আলমারীতেও ঠিক জায়গা বের করে তুলে রাখা সব ই বাপী। আর তারপর ই বাড়ীতে কোনো জিনিস খুঁজে না পেলেই সবার বকুনি – “ঠিক কোথায় গুছিয়ে রেখেছো; এক্ষুণি খুঁজে দাও”। আর বাপী ঠিক বের করেও দিতেন কোথাও না কোথাও থেকে।

আজ বাপী আমাদের অমাবস্যার অন্ধকারে ফেলে কোথায় যে গা ঢাকা দিয়েছেন!!!

Posted in Uncategorized

Half plus Half GirlFriends

Just few times back I finished reading the latest Chetan Bhagat novel ‘Half Girlfriend’. As always it is a story of a young boy and girl. The boy is passionately in love with the girl and it is yet another Chetan Bhagat story of chasing after your passion. If you have gone through the previous five novels by Chetan you will find nothing very new at least for this part, What moved me is that it is the story of a non-English type person – in other words it is the story of you or me – who have done their basic schooling in their mother tongue. I could very well identify myself with this Madhav, at least twice in my life.

I still remember my Lady Brabourne days. Just like Madhav I was not used to speak in English – not even a complete sentence. But actually I had many opportunities to learn. I do have relatives who actually stay abroad and even one European person in the family. I am undoubtedly fortunate about my school and my fully devoted teachers. Unlike other Bengali medium schools of North Calcutta we started learning English right from KG classes. Our sisters tried untiringly to teach us good English with proper grammar. Even in class IX, Sr. Monica tried to work with our pronunciations as well. Remember, a whole 40 minutes period was devoted to ‘laidy’ and ‘baiby’. But alas, it was our own mental block that we kept on escaping any encounter with English.

My English story book reading was restricted to Enid Blyton only. When I joined Lady Brabourne probably I read the three books of ‘Naughtiest Girl’, the ‘R’ Mystery series, The Boy Next Door and probably that was all. No may be one book from ‘Famous Five’ and one from ‘Secret Seven’. Anyway, I was never a voracious reader. My Bengali story book titles were as meager as that. Baba wanted my ‘Horizon to be broadened’. So he put me to LBC as it was popularly known. From the very first day I felt like a fish out of water. The classmates, the seniors, the teachers even – the whole environment was completely new to me, completely different – full of all ‘tansh’ people. I still can’t make out what the so called ‘tansh’ Barnali saw in me. Because on that 23rd August, when our Zoology practical was cancelled, she only suggested that we two can go to the Áudi’ and have a chat. And it Was a real heart-to-heart talk. There was that craze about the Mills & Boones books. All English-types were engrossed in them. Even some of the non-English type boarders were also included in the M-B club. Only I was never included. Even Barnali never let me read them. Still in LBC I was somewhat better than Madhav, as we used to talk in Bengali only. Somehow, I managed to sustain the two years, thanks to Barnali but could never identify myself with the environment, with the culture.

But, the second phase was really quite tough and I don’t think that I have actually come out of it yet. Can you imagine I went to Pune with just limited knowledge of English and Hindi and no knowledge of Marathi at all. How I used to write each and every sentence before making any call to any college for job! I myself am surprised to think that I went all alone to Fergusson College and talked to Prof. D. V. Kulkarni! Oh, I am forever thankful to Anuradha Ma’m and Pallavi to help me at each step and become my only friends in the unknown land. I learnt so many things from Anuradha Ma’m, starting from language to directions, localities, shops, almost everything. She was just ‘God sent’. She was my ‘Riya’ in Pune. She encouraged me every moment for every small thing. When I look back today I do feel that I have traveled quite a long way. Yet the journey is not complete it is still in continuum…..

Posted in Uncategorized

স্বাধীনতা

 

তখন এই ক্লাস টু বা থ্রি তে পড়ি। আমার সব কীর্তিকলাপের দোসর ছিল বিল্লু। স্কুলের পনেরোই আগস্ট কি ২৬ শে জানুয়ারীর অনুষ্ঠান শেষ হলেই বেশীরভাগ সময় পিসির বাড়ী যাওয়া হত। কারণ ঐদিন বাবার ছুটি থাকায় স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ডিউটি পড়তো বাবার ওপর। ফলে স্কুলের পর মামার বাড়ী – পিসির বাড়ী বেড়ানোটা ফাউ পাওয়া যেত। তা সেবার বোধহয় বাবার emergency duty ছিল। তাই স্কুলবাসে বাড়ী ফেরার কথা। আমরা তখন টালায় থাকি। এদিকে হয়েছে কি – ফাংশনের শেষে দুই সাকরেদে পরামর্শ করেছি প্রতিবারের মতোই বিল্লুর বাড়ী যাব এবং সারাদিন চুটিয়ে খেলবো। বাসের ড্রাইভার বহু ডাকাডাকি করা সত্ত্বেও তার সমস্ত কথা অগ্রাহ্য করে এবং সম্ভবতঃ ভানুদিদির সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে গেছি পিসির বাড়ী। বাড়তি আকর্ষণ ঠাম্মা তখন ওখানেই রয়েছে। যা হোক সারাদিন দুই মক্কেলে চুটিয়ে খেলা, এন্তার পতাকা বানানো রঙ করা ইত্যাদি হয়েছে। অত্যন্ত স্বাধীন ভাবেই স্বাধীনতা দিবস পালন করা গেল। বিশ্ব বেয়াড়া মেয়ে – তার ওপর ঠাম্মাও আছে – কাজেই কে আর কি বলবে। আমার তো পোয়া বারো।

তারপর একটু বিকেল হতে শুরু হল আসল ঝামেলা। মা কে ফোন করা হল – সারারাত ডিউটি করে বাবা তখনও বাড়ী ফেরে নি। মা তো সটান অস্বীকারই করল বাড়ী খালি রেখে আসতে। বাবা ফিরে এলে দরজা খুলবে কে! উপরন্তু পিসিকেও বারণ করে দিল বাড়ী পৌঁছে দিতে। হুকুম এল ‘যেখানে আছো সেখানেই থাকো।‘ আরে কি মুস্কিল! পরের দিন যে ক্লাস টেস্ট। পড়াশুনো যথারীতি হয়নি কিছুই। শেষ মুহুর্তের আগে কবেই বা পড়েছি! পাহাড় প্রমাণ বাড়ীর কাজও তো বাকী। মহা ফাঁপরে পরেছি যা হোক।

ঠাম্মা আমাকে নিয়ে একা একা যেতে পারবে না। অগত্যা ফোন করা হল মামার বাড়ী। বেচারী দাদি অসুস্থ শরীরে তিন তলা থেকে দোতলায় এল ফোন ধরতে। করুণ অবস্থা। আমার তখন বুক দুরুদুরু, বিল্লুর মুখ শুকনো। শেষে মুস্কিল আসান নদাদিকে ধরা হল। আমার ছোটবেলার সব আবদার মেটানোর একমাত্র আশ্রয়। সেই সন্ধ্যেবেলা আমাকে নিয়ে নদাদি চলল বাড়ী পৌঁছতে। মনে আছে বাস পাই নি। সেই বেলগাছিয়ার ট্রাম। এমনি কপাল। তারপর অতটা হেঁটে বাড়ী পৌঁছে বহু কাকুতি মিনতির পর বাড়ীর দরজা খুলল মা। নেহাত বুড়োমানুষ নদাদি সঙ্গে করে এসেছে তাই। তখন বাবা দুদিন এক রাত কাজ করে সবে বাড়ী ফিরেছে। কিন্তু তবুও তক্ষুণি ছুটল নদাদিকে বাড়ী পৌঁছে দিতে।

আর আমি তখন মনে মনে ভাবছি – সেই তো গোয়াবাগান অবধিই বাবা গেল; তবে আমায় আনতে যেতে পারল না কেন! আচ্ছা, পরের দিন পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও মা আনতে গেল না কেন? তাহলে তো আর নদাদিকে কষ্ট করতে হত না। শিশু বুদ্ধিতে এমন অনেক প্রশ্নের উত্তরই পাই নি সেদিন। এটুকু বুঝতে পারি নি যে এ সব আমার অবাধ্যতার শাস্তি। আমার ‘একটু বিল্লুর সঙ্গে খেলতে যাওয়া’টা যে বড়দের কত অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে সে বোধ তখন হয় নি। তবে এরপর এমন ভুলও আর কক্ষোনো হয় নি।।

Posted in Uncategorized

Mumbai Dabbawalas

dabb2

It was 19th December 2007, our compulsory week in the college. The first term was over and all our invigilation duties were over as well. So we were having a free or rather very boring time. I could have done the preparations for the next term, but you know I have a habit of doing everything in the 11th hour. [kya kare adat se majboor hun.] To entertain and engage all the staffs, teaching and non-teaching, the college authorities had organized several lectures almost every day. As expected all the programmes were in Pure Marathi, and my Marathi knowledge at that time was really very pathetic.

Anyway, that day the talk was on the ‘Efficient Management of Mumbai Dabbawalas’. Two of the Dabbawalas had come to the college – The chairman and the secretary of their association, the very persons who represented India in Prince Charles’s last wedding. We had some curiosity about them. But thanks to the email chain, many of us had already seen the ppts of them. So we were not very much sure of the success of the presentation, that too at the lazy afternoon hour of the day. Still; actually we had no choice but to sit for the same. It began. And the real magic started. For everybody’s information, at that time there were around 5000 dabbawalas catering to the need of about 200000 customers every day. So, on an average each dabbawala served 40 people. Total area coverage was around 60 – 70 km. per trip. Considering the cost of living of Mumbai- the rate was really unbelievable – only Rs. 300 to 350 per month.  Their average literacy level was only upto class 8 and they were claiming that almost 3500 of them were totally illiterate. Still you will be amazed to know that their failure rate was just 1 in 16 million. They were claiming that they are using zero technology. But the coding system they were using to denote the collection and destination address made us totally spellbound. They were using two different colours on each tiffin box, one to denote collection address and the other destination address. They had several different teams and the colour combination for each team was also different.

dabbawala

Here I am not saying anything about their logistic techniques. For the information of us Bengalees – they have a record of no strike. Their average monthly income then was about RS. 5000 – 6000 and they were happy with it. Each one was the shareholder of the organization. They had 4 dharmashalas at different religious locations around Pune. And those dharmashalas were absolutely free. They are running this business since 1890 and registered as charitable trust in 1956. 4 students from IIM Ahmedabad first came to learn about their efficient management techniques and one person got his Ph. D. by doing research on them. They got 6-sigma for 99.9999% accuracy but claimed that they still had no idea what that actually mean. They had been to Italy twice. And one lady there had actually learned Hindi just to communicate with them. She was also doing her Ph. D. on them. We always have the opinion that sudden fame whirls peoples head. But that day I just saw two of the most down to earth people who were fully devoted to their work. They have the motto ‘work is worship’  and they had the guts even to ask Prince Charles to be outside one of the Mumbai Railway stations, where they were arranging the boxes for final delivery, exactly at 11.15 in the morning, if he was really interested to see their work. From the collection till the delivery of each box atleast 6 people are changed, yet the box always reaches the correct people at the correct time.

I must have bored you with my poor narration and poorer english. But believe me the lecture was so interesting that we never realized when two hours had passed. It was even much after our usual college timing and the talk was in complete Marathi! We are actually paid for delivering lectures, still many times our students find our lectures monotonous or even boring, they sometimes do some mischief in the class and we get irritated and hyper. And here was the lecture by two of the so called less educated people, who made there talk so very interesting and witty even by making fun of themselves which is perhaps the most courageous job.

P.S. Photo courtesy google images.

Posted in Uncategorized

Sindhutai Sapkal –the heart-rending story

This is especially for my non-Maharashtrian friends, who are not familiar with the name. When she was a little girl her parents fought over the issue of sending her to school. Her mother was dead against it. She arranged for her to take the buffaloes to the river for bathing before going to school everyday. Being late for school as well as for work she used to get beating from the teachers at school and parents at home. With no tiffin to eat she used to pretend to pluck flowers after her friends finished their tiffin, in hope of getting some leftovers from their food.  At the age of 9 she was married to a man of 35. At 20 with 9 months pregnancy, she was kicked out of her house by her husband. She fell down unconscious and delivered a baby. When she regained her consciousness she saw a cow was standing on her. But she realized that the cow was protecting her as a mother from other cows and enemies. She herself cut the umbilical cord by hitting it with a stone not less than 16 times.  With the newborn baby she sat for 8 days at the closed door of her in-laws house with a hope of getting something to eat. During the darkness of night one of the lady brought leftovers of the food, and water in gadu, while pretending to go for the natural call. After 8 long days her in-laws drove her away by throwing stones at her. She started singing and begging in trains. Unable to bear any further one day she decided to finish herself. She was just getting ready to commit suicide, when at the dong of 2 in the morning she heard another beggar burning with fever was crying for a drop of water before breathing his last. The irony was she got ample food that day from begging. She went to the dying beggar and shared her Bhakhri (roti) with him. With the food he recovered and that send a new message in her mind. She dropped the idea of suicide and started to share her earnings with the other beggars. But she was only 20 and her baby was only 10 days old. To protect herself from the clutches of the lust of men she took refuge in the nearby samshan.  One day she saw some people are offering some flour to the dead. She prayed badly to God to protect the flour from kites and eagles and after the funeral party left, she searched near the burning body and made the Bhakhri with water from the broken pot and fire from the burnt chita. But she was attacked by the birds and dogs. Unfortunately her cries appeared as voice of the ghost to the villagers. They shut their doors even tightly. But her inner voice told her that the bird’s attack and dog’s barking are the signs for her move back to the locality again. Fighting for three years with her inner self, she finally gave her own daughter to the DagruSeth Ganapati Trust and herself started to  become Aayi (Mother) to the orphans. Today she is taking care of hundreds of orphans. She also has Go Seva Kendras.  She bagged 750 awards and visited 14 countries. But still her organization is a non-grant organization. She is the symbol of courage and fight and women power. I salute her and am fortunate to meet such a person.2013-02-07 12.36.33

Posted in Uncategorized

My experience at TATA MOTORS

I got the opportunity to attend a workshop on ‘Using soft tools in teaching engineering mathematics’ at Vishwakarma Institute of Information Technology, Pune. As per the AICTE norms out of the 6 days we have lecture schedule for only 5 days and had one free day for us. So we decided to have some excursion and went to see the Tata motors’ car factory today. Our original plan was to see the manufacturing of Tata indica, indigo and indigo marina – the automated robotic workshops. We started sharp at 9 o’clock from VIIT by the Vishwakarma Vidyalaya’s bus after having a light breakfast of batata bada sambar and tea. But as the morning time traffic was very heavy and we had to go to Pimpri Pradhikaran area which was very far off we were unfortunately late by around half an hour and reached around 10.45 a.m.

We entered the main Tata Motors’ factory area which was as clean and green as you could think of. There we were greeted with a cup of tea and watched a short documentary on Tata Motors. After that our main journey began with the leadership of Mr. Ram from Administration. We visited the car manufacturing section by their bus and first stopped at the Press Shop. While entering the workshop we were enthralled to see the doors and the sides of the cars piled up everywhere. There we saw how from the steel sheets; which were mainly supplied by other Tata companies or their collaborators, doors and body parts were made. It has 5 phase operation including shearing and piercing. But unfortunately one of the robots there had some problems and though we saw it in reverse order while going in we were deprived of seeing it in correct sequence.

After that we went to the wielding shop. Hard luck struck there too. It was their lunch time from 11.30 to 12 o’ clock and while Mr. Ram explained us the steps of operation and we waited around 20 minutes the workers informed that the automated wielding would not be resumed for the day. Of course some manual work was going on and we could see the wielded car bodies with doors and front and back panels attached were going to the paint station by the conveyor belt. Probably we selected a wrong day for the trip as most of the machines were shutting down for annual preventive maintenance due from tomorrow. But still we could get the sense how from a scratch the whole car is being made. In every 63 seconds a new car is coming up. And from the starting till the final stage one car takes about 24 hours. We also got to know that the daily electricity bill for the wielding shop alone is Rs. 33laks. And they were claiming that their profit per car is around 5 to 10 thousands.

Anyway, lastly we went to the see the final assembly. The total conveyor length was 9 km from wielding shop to the finished product. To begin with the final assembling first the doors were removed. Then all the inner components including the seats and the mats were fitted and all the wirings were done. Lastly the engines were fitted and after refitting the doors wheels were tested for speed and break. Finally the finished car ran through a shower test.

We had also planned to visit the safari plant and the old assembling shop. But somehow that too didn’t work. In the ground the new cars of various models and multiple colours were waiting for transportation. In the Pune factory itself 48 different models of cars with number of variations for each model are being manufactured. It was so tempting for us that if our pockets would have permitted each one of us would have been glad to return in our brand new Tata car.

We had our lunch there too. The canteen was also a new experience for me. For the first time I saw what a factory canteen looks like. We had a very simple but good food. With the final group photo we started our return journey at 2.45 p.m. and reached home at around 4 o’clock. To me this trip is the best part of the whole workshop. Still if all the automated machines would have worked nothing like it.

In the morning I remembered our trips with the students of Victoria College, mostly initiated by me. I still sometimes recall Victoria College as my college, my work place. I like to fantasize that when I shall go to Kolkata I shall go there as before. It sometimes gives pain to think about my own hometown, my family and friend, whom I left behind.  But when I think of the opportunities I am getting here at Pune as the Senior Lecturer of Vishwakarma Institute of Technology I feel myself really lucky and am thankful to God.

 

P.S.: Please don’t be too critical about my English. I just wanted to share my experiences with you.

 

Thank you.

Posted in Uncategorized

স্মৃতির সুরভি

আচ্ছা, বিধান নিবাসের প্রথম রবীন্দ্রজয়ন্তীর কথা মনে পড়ে ! গোরাকাকুর উদ্যোগে সেই প্রভাত ফেরী। আমার মতো Lady কুম্ভকর্ণ সেই কোন কাকভোরে পাঁচটার সময় ঘুম থেকে উঠে লাল পাড় সাদা শাড়ী পরে ready । ইস্ত্রীওয়ালার গাড়ীটা সাদা চাদরে ঢেকে তার ওপর চন্দ্রাদির হারমোনিয়াম আর পল্টুদার তবলা চাপিয়ে সবাই মিলে পেছনের গেট থেকে গান গাইতে গাইতে ছাতিম তলায় আসা…। ‘হে নূতন’ , ‘ওই মহামানব আসে’ , ‘আজি শুভদিনে পিতার ভবনে’ , ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ’… আরোও কত গান। আমাদের গানের সুরে ঘুম ভেঙ্গেছিল সেদিনের বিধান নিবাসের। তখন বিধান নিবাসের এইরকম কোনো অনুষ্ঠান হলেই আমার পিসতুতো বোন মালা চলে আসত বিধান নিবাসে। আর এই প্রভাত ফেরীর বিশাল সাফল্যে আমাদেরও মাথার পোকা উঠলো নড়ে। আমাদের ও রবীন্দ্রজয়ন্তী করা দরকার – আর তাতে শুধু গান হলেই  হবে না – নাচ, আবৃত্তি, নাটক সব চাই। নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা সব তো তৈরী – মালা – আমাদের স্কুলের নামকরা শিল্পী। অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে আর গুরুত্ব প্রমাণ করতে শুরুতে কিন্তু সংস্কৃত শ্লোক চাই। একটিই সূর্‍্যবন্দনা জানা ছিল – তার সঙ্গে রবি ঠাকুরের দূর-সুদূ্রেও কোনো সম্বন্ধ নেই…। কিচ্ছু  করার নেই। শ্লোক তো চাই; কাজেই…। তারপর সোমা আর পতুর কর্ণ-কুন্তী সংবাদ । লাল্ পাড় সাদা শাড়ীতে সোমা ‘কর্ণ’ আর ধুতি পরা পতু ‘কুন্তী’। পরের নাটকের make-up আর কি। নাহ, আমাদের অনুষ্ঠান সেদিন হয় নি। হয়েছিল পরের দিন সোমাদের বাড়ী। অসুবিধে কিছু নেই, ২৫ শে বৈশাখের পর রোজই বাঙ্গালীর রবীন্দ্র জয়ন্তী। আর উপরি পাওনা ২৬শে সুভাষ কাকু- মণিমালা কাকিমার বিবাহবার্ষিকী। তাই কাকু নিজে থেকেই প্রায় পুরো বিধান নিবাস্ কে নিমন্ত্রণ করে এসেছিলেন সন্ধ্যেবেলা চা সহযোগে আমাদের অনুষ্ঠান দেখার। আর আমাদের পায় কে! নাটক হল রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ । সেই প্রথম আমার জনসমক্ষে অভিনয়। প্রথমেই double role. ছিঁচ কাঁদুনে মাখন আর বদমেজাজী দজ্জাল মামী – হুঁ হুঁ সেখানে The Great আমার ঐক্যমত্ত ও স্বতঃস্ফুর্ত মনোনয়ন –। ফটিক হল মালা; সোমা সেজেছিল ফটিকের মা আর রূপু ফটিকের মামা। একদিনের মধ্যে দুর্দান্ত হয়েছিল কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানটা।

সেই শুরু আমাদের পাগলামি আর প্রতিভাবিকাশের। তারপর মাথায় চাপলো পুতুলের বিয়ে। সোমার ছেলে আর আমার মেয়ে। কিন্তু বিয়ের আগেই দুই মায়ের শর্ত হয়ে গেল যে বিয়ের পরেই কিন্তু যার যার ছেলে মেয়ে তার তার কাছে ফিরে যাবে। তার জন্যে বিয়ের ভুরি ভোজ, বাসর জাগা সেসব নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম হবে না। তত্ত্ব-তাবাশ, যৌতুক কিচ্ছু বাদ যাবে না। বিয়ে নিয়ে দুপক্ষের মনোমালিন্যও বাদ গেলো না। আর তার মধ্যস্থতা করবার জন্যে কত্তাব্যক্তি হিসেবে ডাকা হল বুবাইদিকে।

বিকেলবেলা ছাদের ওপর যখন ট্যাঙ্কের জল জমতো – সেই জলে শুরু হোতো আমাদের শিব-পার্বতী খেলা। শ্যামলদার ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে – N1 থেকে N9 অবধি সব ছাদের দরজা খুলে দিতে হবে। আমরা বিধান নিবাসের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অবধি ছাদে ছাদে চরে বেড়াবো। ওটাই আমাদের খেলার মাঠ।

এরপর দোল-দুর্গোৎসব আস্তে আস্তে শুরু হল সবকিছু। ধর না কেন প্রথম বছর পূজোর সেই শ্যামা। গান বা অভিনয় কোনক্রমে উতরে দিতে পারি, কিন্তু অসীম ক্ষমতা আর ধৈর্য বুবুদির। আমার মত কাটখোট্টাকে দিয়ে নাচ করানো কি চাট্টিখানি কথা! অন্য কেউ হলে সেই একবারেই ক্ষান্ত দিত। বুবুদি মহান -। পরের বছর চিত্রাঙ্গদা আর বুদ্ধু-ভুতুম। ক্রমশ সাহস বাড়তে বাড়তে বললে কিনা বাইরে হল ভাড়া করে কচ-দেবযানি হবে । বোঝো কান্ড !!! একদিন আমাকে নাচ শেখাতে গিয়ে বুবাইদি এক্কেবারে নাকানি-চোবানি। শেষে গোরাকাকু হাল ধরতে এলেন। আমায় ‘নাচিয়ে’ বানিয়েই ছাড়বেন। আর আমিও তেমনি ঢ্যাঁটা। কিছুতেই হয় না। উফ, অনুষ্ঠান্ টা বন্ধ হতে আমি নাচের হাত থেকে বাঁচলাম। বাকিদের অবশ্য খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

আর কানাইজেঠুর বসন্ত উৎসব! মনে আছে! সব্বাইকে কিছু না কিছু করতেই হবে। তুলতুল গেয়েছিল ওর প্রিয় গান – ‘গানের ভেলায় বেলা অবেলায়’। (তুলতুল, পড়ে কান মুলে দিস নি please!) সেখানে গৌরজেঠুর ‘ও ভাই কানাই কারে জানাই দুঃসহ মোর দুঃখ’ super-duper hit। আর বাবার ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ থেকে ঊর্দু সংলাপ নতুনত্ব এনেছিল।

আর ছোটোবেলার সেই সই সংগ্রহর বহর! কোন স্মরণ সভা হোক বা বিবাহবাসর – আমরা কচিসংসদ ডাইরী নিয়ে তৈরী। বিধান নিবাসে তো বিখ্যাত মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে, আমাদের হামলার শেষ নেই। মনে আছে, নুপুরদির বিয়ের দিন প্রেমেন্দ্র মিত্রের সই নেবার জন্যে আমরা কি নাছোড়বান্দার মতো পিছু নিয়েছিলুম। Community hall থেকে S 4 – শেষকালে যখন গাড়ীতে উঠে পড়েছেন তখনও ঘ্যান ঘ্যান চলছে। ভীষণ বিরক্ত হয়ে গাড়ীতে বসে অন্ধকারে আঁকাবাঁকা সই দিতে তবে মুক্তি। বিপাকেও পড়েছি কতবার! ‘সই নিতে তো এসেছ, আমি কে বলত?’ ‘আচ্ছা, আমার কোন লেখা পড়েছো ?’ – এ সব উত্তরহীন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। ওই বয়সে এগুলোই ছিল আমাদের adventure.

আরেকটা মজার কথাও হঠাৎ মনে পড়ে গেল। সেই বিধান নিবাসের বিজয়া সম্মিলনী – । ঠাকুর ভাসান দিয়ে ফিরে যেই শান্তির জল দেওয়া হত, শুরু হত আমাদের বিজয়ার প্রণাম। ঘাড় নীচু করে লাইন ধরে প্রণাম শুরু করতুম – লাইন খতম হবার আগে মাথাই তুলতাম না। কাজেই একই লোক কে কতবার যে প্রণাম করে ফেলতাম…। তারপর শুরু হত N1 থেকে S7 অবধি সব ফ্লাটে গিয়ে বিজয়া সারা। মনে পড়ে মানস কাকুর বাড়ী তে কাকু আমাদের কিশোর কুমারের নকল করে দেখিয়েছিলেন আর দেখিয়েছিলেন বাঁশী বাজিয়ে কৃষ্ণের নাচ। পুজোর নাটকে মানসকাকু যদি অভিনয় করতেন প্রভাতকাকুর ‘ধাত্তেরি’ বলে আধখানা গোঁফ খুলে ফেলার মত সেটাও মনে হয় চিরকাল সবার মনে থেকে যেত হাসির খোরাক হয়ে।

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের মাঝে এক টুক্‌রো সময় বের করে যখন নিজের মুখোমুখি বসি তখন এমন কত কথা যে ভীড় করে মনের মাঝে – লিখতে বসলে হয়তো উপন্যাসই হয়ে যাবে একটা। নাহ্‌, ভয় পাবার দরকার নেই। পাঠক কুলকে শান্তি দিয়ে এবারের মত এখানেই ক্ষান্ত দিচ্ছি।।