Posted in Reflections

শ্রীরামকৃষ্ণ-স্তোত্র দশকম্‌

শ্রীরামকৃষ্ণ-স্তোত্র দশকম্‌

-স্বামী বিরজানন্দ

ব্রহ্ম-রূপমাদি-মধ্য-শেষ-সর্ব-ভাসকম্,
ভাব-ষটক-হীন-রূপ-নিত্য-সত্যমদ্বয়ম্।
বাঙমনোঽতি-গোচরঞ্চ নেহি-নেতি-ভাবিতম্,
ত্বং নমামি দেব-দেব-রামকৃষ্ণমীশ্বরম্।।১

আদিতেয়ভীহরং সুরারি-দৈত্য-নাসকম্
সাধু-শিষ্ট-কামদং মহী-সুভার-হারকম্।
স্বাত্মরূপ-তত্ত্বকং যুগে যুগে চ দর্শিতম্,
ত্বং নমামি… ।।২

সর্বভূত-সর্গ-কর্ম-সূত্র-বন্ধ-কারণম্
জ্ঞান-কর্ম-পাপ-পুণ্য-তারতম্যসাধনম্।
বুদ্ধি-বাস-সাক্ষী-রূপ-সর্ব-কর্ম-ভাসনম্,
ত্বং নমামি… ।।৩

সর্ব-জীব-পাপ-নাশ করাণং ভবেশ্বরম্,
স্বীকৃতঞ্চ গর্ভবাস দেহধানমীদৃশম্।
যাপিতং স্ব-লীলয়া চ যেন দিব্যজীবনম্,
ত্বং নমামি… ।।৪

তুল্য-লোষ্ট্র-কাঞ্চনঞ্চ হেয়-নেয়-ধীগতম্,
স্ত্রীষু নিত্য-মাতৃভাব-শক্তিরূপ ভাবুকম্।
জ্ঞান-ভক্তি-ভুক্তি-মুক্তি-শুদ্ধ-বুদ্ধি-দায়কম্,
ত্বং নমামি… ।।৫

সর্ব-ধর্ম-গম্য-মূল-সত্য-তত্ত্ব-দেশকম্,
সিদ্ধ-সর্ব-সম্প্রদায়-সম্প্রদায়-বর্জিতম্।
সর্ব-শাস্ত্র-মর্ম-দর্শি-সর্ববিন্নিরক্ষরম্,
ত্বং নমামি… ।।৬

চারুদর্শ-কালিকা-সুগীত-চারু-গায়কম,
কীর্ত্তনেষু মত্তবচ্চ নিত্য-ভাবহিহ্বলম্।
সূপদেশ-দায়কং হি শোক-তাপ-বারকম্,
ত্বং নমামি… ।।৭

পাদপদ্ম-তত্ত্ব-বোধ-শান্তি-সৌখ্য-দায়কম্
সক্ত-চিত্ত ভক্ত-সূনু নিত্য-বিত্ত-বর্ধকম্।
দম্ভি-দর্প-দারণন্তু নির্ভয়ং জগদগুরুম্,
ত্বং নমামি… ।।৮

পঞ্চবর্ষ-বাল-ভাব-যুক্ত-হংস-রূপিণম্,
সর্ব লোকরঞ্জনং ভবাব্ধি-সঙ্গ ভঞ্জনম্।

শান্তি-সৌখ্যসদ্ম-জীব-জন্মভীতি-নাশনম্,
ত্বং নমামি… ।।৯
ধর্ম-হান-হারকং ত্বধর্ম-কর্ম-বারকম্,
লোক-ধর্ম-চারণঞ্চ সর্ব-ধর্ম-কোবিদম্।

ত্যাগি-গেহি-সেব্য-নিত্য-পানাঙ্ঘি-পঙ্কজম্,
ত্বং নমামি… ।।১০
স্তোত্রশূন্য-সোমকং সদীশ-ভাব-ব্যঞ্জকম্,
নিত্য-পাঠকস্য বৈ বিপত্তি-পুঞ্জ-নাশকম্।

স্যাৎ তদাপি জাপ-যাগ-যোগ-ভোগ-সৌলভম্,
দুর্লভন্তু রামকৃষ্ণ-রাগ-ভক্তি-ভাবনম্।।১১

ইতি শ্রীবিরজানন্দ-রচিতং ভক্তি-সাধকম।
স্তব-সারং সমাপ্তং বৈ শ্রীরামকৃষ্ণ-তূণকম্।।১২

১। পরব্রহ্মরূপঃ

শ্রীরামকৃষ্ণ সেই নির্গুণ নিরাকার পরব্রহ্ম যাঁর আলোয় সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্ত আমাদের কাছে প্রতিভাত হচ্ছে। তিনি জন্মাদি ষড়বিকাররহিত কারণ তিনি স্বরূপতঃ ব্রহ্ম। তিনি নিত্য-সত্য স্বরূপ, তিনি অদ্বয় – তাঁর কোনোও দ্বিতীয় নেই। তিনি বাক্য ও মনের অগোচর – পঞ্চইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নাম-রূপাদি কোনো বস্তুদ্বারাই তাঁকে ব্যাখ্যা করা যায় না।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

২। সগুণ-সাকার অবতাররূপঃ

পাপের ভারে পৃথিবী যখন ভারাক্রান্ত তখন যুগে যুগে তিনি অবতাররূপ পরিগ্রহ করে দেবতাদের শত্রু দৈত্যদের নাশ করে আদিত্যাদি দেবতার ভয় দূর করেন এবং সাধু মহাত্মাদের কাম্যবস্তু দান করেন। তিনি নিজের আত্মরূপে প্রতিষ্ঠিত হলেও অবতার রূপে জন্ম নিয়ে তিনি সাধারণের মতই ব্যবহার করেন।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৩। কর্মফলদাতা সাক্ষীরূপঃ

তিনি সৃষ্টি ও জীবের কর্মফলের নিয়ন্ত্রা। পঞ্চভূতের সংমিশ্রণে সৃষ্টির রহস্য, পরা-অপরাবিদ্যা সব তাঁর অধিগত এবং জীবের জ্ঞান ও কর্ম অনুসারে তিনি তাদের ফলদান করেন। তিনি বিবেক-বুদ্ধিরূপে জীবের অন্তরে বাস করেন এবং সাক্ষীরূপে তাদের সকল কর্ম অবলোকন করেন।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৪। অবতারত্ব ও নরলীলাঃ

তিনি জগতের ঈশ্বররূপে শরণাগত জীবের সর্ব পাপ নাশ করে তাদের কর্মফল থেকে মুক্তি দিতে পারেন। তিনি কর্মবন্ধনরহিত হয়েও স্বেচ্ছায় মানবজন্ম স্বীকার করে ধরায় অবতীর্ণ হন এবং জীবকল্যাণে এক অনবদ্য দিব্যজীবনের চিত্র আমাদের সামনে রেখে গেছেন।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৫। ব্রহ্মজ্ঞানী লক্ষণ – স্থিতপ্রজ্ঞরূপঃ

তিনি দ্বৈতবুদ্ধিরহিত। তাঁর কাছে লোহা ও সোনা সমান এবং কোনও কিছুই ত্যাজ্য বা গ্রাহ্য নয়। তিনি সর্বাবস্থায় সকল স্ত্রীলোককে মাতৃরূপে, জগজ্জননীর প্রকাশরূপে দর্শন করেন। তিনি পরা-অপরা বিদ্যা, বিবেক বুদ্ধি, জ্ঞান-ভক্তি দান করতে পারেন। আবার তিনি জীবকে তাদের কামনা অনুযায়ী একাধারে জাগতিক সম্পদ ও জন্ম-মৃত্যুচক্র থেকে মুক্তিও দান করতে পারেন।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৬। শাস্ত্ররূপী শ্রীরামকৃষ্ণঃ

তিনি সর্বধর্মের মূলে যে প্রকৃত সত্য – সেই তত্ত্বের জ্ঞাতা। কারণ তিনি সব পথ দিয়েই সেই সত্যকে নিজে উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি কোনও সম্প্রদায়কেই অশ্রদ্ধা করেন না কিন্তু নিজে সমস্ত সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধে। তিনি আপাত দৃষ্টিতে নিরক্ষর হলেও সর্ব শাস্ত্রের প্রকৃত মর্মদর্শী ও সর্বশাস্ত্রের রক্ষক।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৭। সিদ্ধসাধক শ্রীরামকৃষ্ণঃ

তিনি তাঁর ভক্তিপূর্ণ সঙ্গীতে মা কালীকে প্রসন্ন করে মায়ের দর্শন লাভ করেছিলেন। তিনি অহোরাত্র ঈশ্বরের ভাবে বিহ্বল হয়ে থাকতেন এবং ভাবের ঘোরে কীর্তনানন্দে মত্ত হয়ে যেতেন। তিনি তাঁর শিষ্যগণকে সম্যক উপদেশ দিতেন যাতে তাঁরা সংসারের শোকতাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৮। অভয় ও করুণামূর্তি, ভক্তবৎসল শ্রীরামকৃষ্ণঃ

তাঁর মহিমা জেনে যাঁরা তাঁর পাদপদ্মে শরণ নিয়েছেন তিনি তাঁদের সুখ ও শান্তি প্রদান করেন। আবার জাগতিক বিষয়ে আসক্ত ভক্তকে তিনি নিত্য জাগতিক সম্পদ দান করেন। তিনি জগৎগুরুরূপে নির্ভীক হস্তে জীবের দম্ভ ও দর্প হরণ করে তাদের সঠিক মার্গ দর্শন করান।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

৯। ঈশ্বররূপী শ্রীরামকৃষ্ণ – বাল্যলীলাঃ

পাঁচবছর বয়সে আকাশে কালো মেঘের গায়ে সাদা বকের সারি দেখে তাঁর প্রথম ভাব হয়েছিল। তিনি সেই বালক বয়সেই তাঁর রঙ্গপ্রিয়তা ও সরস বাক্যালাপের মাধ্যমেই তাঁর গ্রামের মানুষের সংসারাসক্তি ও মোহবন্ধন মোচন করেন। শান্তি ও সুখের মূর্তপ্রতীক তিনি লোকের মন থেকে জন্ম-মৃত্যুর ভয় দূর করেন।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

১০। ধর্মসংস্থাপক শ্রীরামকৃষ্ণঃ

তিনি ধর্মের হানি, ধর্মের গ্লানি নাশ করেন এবং অধর্ম কর্ম দূরীভূত করেন। তিনি সর্বধর্মের মূল সত্য জেনেও প্রচলিত লোকাচার সমূহ মেনে চলেন। ত্যাগী ও গৃহী, ভক্ত-অভক্ত সকল মানুষেরই সংসারের সকল কলুষ ও সংসারাগ্নি থেকে মুক্তিলাভের জন্য তাঁর পবিত্র, পাবনী চরণকমলই একমাত্র আশ্রয়।

সেই দেবের দেব শ্রীরামকৃষ্ণরূপী ঈশ্বরকে নমস্কার জানাই।

১১। ফলশ্রুতিঃ

নিত্য স্তোত্রপাঠে লোকের সকল বিপত্তি নাশ হবে ও তাদের মনে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি দুর্লভ অনুরাগ ও ভক্তিভাব জাগ্রত হবে এবং তাদের জপ-যোগের সকল ফললাভ হবে ও সুকৃতির ফল বহুগুণে বর্ধিত হবে।।

Kind acknowledgement :

Swami Shantivratanandaji, Minister-in-Charge, EIRE Vedanta Society, Ireland.

Author:

I do whatever I like and whenever I like :) ;P

Leave a comment