আচ্ছা, ‘হযবরল’ র সেই বেড়াল টাকে মনে আছে! সেই যে সেই ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে বিশ্রীরকম হাসতে হাসতে পালিয়ে গেল! ঠিক সেই রকম ফ্যাঁচ ফ্যাঁচে হাসি যদি দেখতে চাও তো আমাদের বাড়ি আসতে হবে।
রুমাল যদি বেড়াল হতে পারে তো ছোটবাবুও সুকুমার রায়ের বন্ধু হতে পারে। মুখখানা দেখো একবার – আহা, ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না! সে আজ বলে নয় – সে-ই ছোট্টবেলা থেকে। বাড়িতে কোন লোক এলে ঘাপটি মেরে চেয়ার-টেবিলের তলায় বসে থাকত। আর দাদার কীর্তিকলাপ লক্ষ্য করত। মানে মনে মনে মাপতো ঠিক কতদূর পর্য্যন্ত খোলসটা ছাড়া যায়।
নইলে ভাব একবার – এই আমাদের বড়দা – যাঁকে কি না ওর বাবা এখনও অবধি ভয় পায়, সেই আড়াই বছর বয়সে তাঁর টাকে তবলা বাজায়!!
লোকে ভাবে আমার বুঝি আর কোনো কাজ নেই – মা হয়ে বানিয়ে বানিয়ে ছেলের সম্বন্ধে বলছি। “আহা রে, দেখ তো কেমন ঠান্ডা শান্ত ছেলে; তুই খালি বাজে কথা বলিস!” তা বটেই তো! নইলে আমার সুখ হয় না কি না!!
জানো না তো ওই একরত্তি ছেলে চুপচাপ কেমন সব পর্যবেক্ষণ করছে। নইলে ভাব ‘মনের মানুষ’এর দাড়ি গোঁফওয়ালা ছবি দেখে ওর ঠাম্মা যখন বলছেন “বাব, এ লোক্ টা কে রে?” গম্ভীর হয়ে উনি বললেন “বুম্বাদা”। যেন কত কালের চেনা! তখন বয়স কত হবে? সাকুল্যে পাঁচ। তার মানে বাবার আদর খেতে খেতে উনি ‘মীরাক্কেলে’ ঠিকই দেখে নিয়েছেন কে ‘বুম্বাদা’।
কখন যে কোথায় কি বোম ফাটাবেন বোঝা দায়। টিভির খবরে দেখে কখন তিনি ‘লস্যিৎ মালিঙ্গা’ কে চিনে রেখেছেন, আবার কখন ‘লিওনেল মেসি’। কিণ্ডারগার্ডেনের গণ্ডি পার হয়েছেন কি না সন্দেহ – ‘মেসি মেসি’ করে অস্থির। তারজন্যে আবার কলকাতার ময়দান মার্কেট থেকে মেসির জার্সি কেনা হল – ভাবা যায়!
এক্কেবারে বয়ে যাচ্ছে; সারাদিন খালি খেলা। এদিকে গানের সুর একবার শুনলেই গুন্গুন চলে সারাদিন। নিয়ে গেলুম গানের ক্লাসে। সেখানে আবার রিমঝিম – একটু বেশিই ভাল মেয়ে – রোজ নিয়ম করে গান প্র্যাক্টিস করে আসে। আর দুষ্টু দস্যি ছেলেদের নামে নালিশ জানায়। চলছিল বেশ, গানের বদলে বাবুনের সঙ্গে দুষ্টুমি করে। খালি বাড়ি এসে বলত “রিমঝিম একটা Complain Box.” তারপর এত নিয়মনিষ্ঠার ঠেলা খেয়ে সাত বছর বয়সেই তার চূড়ান্ত দার্শনিক মন্তব্য – “Sangeet suits girls better”!!! ‘মা’ নামক মহিলাটির ওপর কোনোদিনই বিশেষ ভরসা নেই। মহিলা এক্কেবারে ‘Lady Hitlar’ – কখন আবার ধরে নিয়ে যায় গানের ক্লাসে ঠিক কি! তাই হুকুম জারি হল – “তোমারও আর গানের ক্লাসে যাবার দরকার নেই”। “কেন রে – আমি তো ‘Girl’”। তখন বিজ্ঞের মতো বললে – “না, তুমি মাম্মাম”। অর্থাৎ ওখানেই সব আলোচনার ইতি।
জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল লোক্ কে বোকা বানানো। সারা বছরই তার পয়লা এপ্রিল। আর তারপরে ওই ছোট্ট মুখের ফাজিল হাসিটা যদি দেখো একবার – বোকা বনে যাবার সব রাগটুকু গলে জল হয়ে যাবে একেবারে।
ছেলেদের নিয়ে গাড়ি করে বম্বে বেড়াতে গেছি। ওনার তখন পাঁচ বছর। ঠাম্মা পই পই করে বলে দিয়েছেন ছেলেদের হাত ছাড়বে না একদম. ‘Country Club’ এ থাকা হয়েছে। এপাশে ক্লাব আর ওপাশে গেস্ট হাউস – মাঝে রাস্তা। সিঁড়ি দিয়ে নামলেই সদর দরজা পেরিয়েই বড় রাস্তা। সকালবেলা ঘর ছাড়া হবে। বাবা গেছেন রিসেপ্সনে। আর আমি দাদাকে তৈরী করছি। উনি তখনও ঘুমোচ্ছিলেন। ওমা বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি খাট খালি। দ্যাখ দ্যাখ সে কোথায় গেলো! শিগ্গিরি যা দেখে আয় বাবার কাছে আছে কি? বাবা বলে কোথায় সে তো ঘরেই ছিল। অতটুকু বাচ্ছা – হৈ হৈ হুলুস্থুল। যেখানে যত লোক ছিল সবাই ছোটাছুটি করছে। বড় রাস্তায় বেরিয়ে যায় নি তো! দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। ভাই দেখেছেন তো ঠিক করে। ওরে বাবা বম্বের মত জায়গা। ছেলে কোথায় গেল, কে নিয়ে গেল! ভয়ে প্রাণপাখি খাঁচা ছাড়া। একবার ছাদে, একবার রাস্তায়। সবাই মিলে ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকি। ও মাঃ! ওই দেখো দুষ্টু সর্দার জানলার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বসে আছে! আবার বলে কিনা “আমি তো জানলা দিয়ে দেখছিলুম তোমরা আমাকে খোঁজাখুঁজি করছো”!
খুব চেনা আরেকজনের কথা মনে পড়ে গেল কি! সেই বন্ধুদের বোকা বানিয়ে পাঁচিলের ওপরে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে বসে মজা দেখতে থাকা ‘পাগলা দাশু’।।